Site iconদৈনিক দেশের সংবাদ deshersangbad.com

মাথার ওপর থেকে কালো মেঘ সরে গেছে ঘাঁটি উদ্ধারে তৎপর জাতীয় পার্টি

রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন সেনাপ্রধান, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। বচারপতি আব্দুস সাত্তার ছিলেন রাষ্ট্রপতি। সে সময়কালে দেশ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্যায়-অত্যাচার-অবিচার ইত্যাদি দেশের মানুষকে শঙ্কিত ও সংক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। দেশ পরিচালনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এসব বিষয় সামাল দিতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় ২৪ মার্চ ১৯৮২ তারিখে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার স্বেচ্ছায় রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে সামরিক আইন জারি করেন। তিনি (রাষ্ট্রপতি) দেশের শাসনভার অর্পণ করেন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ। এরশাদ শাসনভার গ্রহণের পরপরই সে সময়কার নানা অরাজকতার অবসান ঘটে। দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। সে সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংবাদপত্র এরশাদের দায়িত্বভার গ্রহণকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়। গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১ জানুয়ারি ১৯৮৬ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরের ৭ মে তিনি জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনে বিএনপি বাদে আওয়ামী লীগসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এর ফলে দেশে আবার গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত ও উল্লেখযোগ্য নাম। জাতীয় পর্টির (জাপা) সামনে আসলেই মানুষের মনে পড়ে রংপুরের নাম। রংপুরের সন্তান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারী জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল। জাতীয় পার্টির শ্লোগান হলো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পল্লী বন্ধু নামে পরিচিত। এরশাদ সরকারের শাসনামলে দেশের অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এরশাদ সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপন করে ছিলেন এরশাদ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৮৬ সালে ৩শত আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে জয়লাভ করে সকরকার গঠন করে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শত আসনের মধ্যে ২৫১ আসনে জয়লাভ করে সকরকার গঠন করে জাতীয় পার্টি। ১৯৯০ সালে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার পর জেলে যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। জেলে যাওয়ার ২ মাসের মধ্যে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এরশাদ ৫টি আসনে নির্বাচন করে ৫টিতে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দেশের ৩শত আসনের মধ্যে ৩৫টি আসনে নির্বাচিত হন। পাঁচটি আসনে জিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দারুণ ভাবে ফিরে এসেছিলো জাতীয় পার্টি ও এর প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ৩২টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় পাটি। এসময় বৃহত্তর রংপুর জাতীয় পাটির ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত ছিল। রংপুর, গাইবান্ধা,লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার ২৩ আসন জাতীয় পাটির দখলে ছিল। আওয়ামী লীগের ফাঁদে পড়ে মহাজোটের রাজনীতির নামে জাতীয় পাটিকে দূর্বল করে ফেলে জাতীয় পাটির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুরে হানা দেয় আওয়ামী লীগ। মহাজোটের রাজনীতিকে পুঁজি করে একের পর এক বৃহত্তর রংপুরের আসনগুলো দখলে নেন আওয়ামী লীগ। ২০২১ সালের নির্বাচনে সারা দেশে ১৪টি আসনে জয়লাভ জাতীয় পার্টি। বৃহত্তর রংপুরের আসনগুলোতে শক্ত অবস্থান করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সারা দেশে ২৭টি আসন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সারা দেশে ৩৪টি আসন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সারা দেশে ২২টি আসনে জয়লাভ কওে জাতীয় পাটি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টি আসনে জয়লাভসহ সারা দেশে ১১টি আসনে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী। আলোচনায় আসে এরশাদের জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রংপুরে দলকে পুনর্গঠনে কাজ করছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীরা। দলের ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করতে চান তারা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিবর্তনের যে হাওয়া বইছে, সেই হাওয়া রংপুরেও লেগেছে। বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি রংপুরে জাপার নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারা সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নেমেছেন। দলের শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। সম্প্রতি রংপুর শহরের সেন্ট্রাল রোডে দলীয় কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গসংগঠনের যৌথ জরুরি সভা হয়। সভায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান ও তাদের পাশে থাকতে নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি দলকে সুসংগঠিত করতে উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং নগরীর থানা ও ওয়ার্ড কমিটি শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানানো হয়। জাপার একাধিক নেতা বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান ও দলকে শক্তিশালী করতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগাম প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। একসময় বৃহত্তর রংপুর ছিল জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। তখন বৃহত্তর রংপুরের ২৩টি আসনই ছিল জাপার দখলে। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির ভোটে ২৬ আসনে ছাড় পায় জাপা। কিন্তু আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে হেরে ১১ আসন পেয়ে বাকিগুলোতে জামানত হারায় জাতীয় পার্টি। রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিই পায় আওয়ামী লীগ। শুধু রংপুর-৩ (সদর) আসনে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জয়ী হন। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ স¤পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে দেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। জাতীয় পার্টিও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার নানা কূটকৌশলে জাতীয় পার্টিকে কোণঠাসা করে রেখেছিল। সাধারণ মানুষ ফের ভোট উৎসবে মেতে উঠবে। এখন জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুর ফিরবে পুরোনো ঐতিহ্যে। জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টির ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। দল সুসংগঠিত করতে সবাই কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি কর্পোরেশস মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কৌশলে জাতীয় পার্টিকে তছনছ করে দিয়েছে। কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না। সেদিন আর নেই, মাথার ওপর থেকে কালো মেঘ সরে গেছে। সময় এসেছে আসন পুনরুদ্ধারের।

Exit mobile version