পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা, তাপস ও সেলিম জড়িত: নিহত শাকিলের ছেলে

‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই, যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে।’
রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিডিআর বিদ্রোহে নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিডিআর বিদ্রোহে নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া। 

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

রাকিন আহমেদ বলেন, 'এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে।'

তিনি বলেন, 'পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই, যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে।'

রাকিন আহমেদ বলেন, 'গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ট্রায়াল বা তদন্ত আমরা মানি না। কারণ প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কি তার নিজের বিচার করবে? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করল, ডাল-ভাতের কথা বলল। নীরবতায় সহ্য করতে হয়েছে।'

এসময় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সেই দিনটিকে শহীদ সেনা দিবস করারও দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

নতুন সচিব পেল ৪ মন্ত্রণালয়

মো. আব্দুল মোমেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সিআইপি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, টিপু মুনশি, এফবিসিসিআই,

চার মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে মোট পাঁচ সচিবকে চুক্তিভিত্তিতে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

এদের মধ্যে মো. আব্দুল মোমেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবদুর রশিদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং এহসানুল করিমকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এম এ আকমল হোসেন আজাদকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে।

নাসিমুল গণিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, নবনিযুক্ত সচিবরা সবাই প্রশাসন ক্যাডারের ৮২তম ব্যাচের কর্মকর্তা।

এদিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তত চারজন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করেছে সরকার।

২২ দিনের আন্দোলন, নিহত অন্তত ৬৫০

১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে নিহত হয়েছেন ছয় শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
উত্তরার আজমপুরে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে দুজন বিক্ষোভকারীদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় নিথর পড়ে থাকতে দেখা যায়। ৪ আগস্ট ২০২৪। ছবি: স্টার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে শুরু হওয়া সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের আগে-পরের বিক্ষোভ-সংঘাত-সহিংসতায় অন্তত ৬৫০ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়-ওএইচসিএইচআর।

গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত সংস্থাটির 'বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ' শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও একই দিনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (বর্তমানে পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত মানুষের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।

ওএইচসিএইচআর—এর ১০ পৃষ্ঠার ওই প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং আন্দোলনকারীদের তথ্য অনুযায়ী ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে নিহত হয়েছেন ছয় শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আর ৫ আগস্ট ও এর পরে মৃত্যু হয় প্রায় ২৫০ জনের।

চট্টগ্রামের এনায়েতবাজারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় আওয়ামী লীগের এক সমর্থক। ৪ আগস্ট ২০২৪। ছবি: স্টার

এর পাশাপাশি সরকার পতনের পর ৭ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত 'প্রতিশোধমূলক হামলায়' নিহতের সংখ্যা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া যায়নি নয় বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে, যার মধ্যে সহিংসতায় আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তিরাও আছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মৃত্যুর জন্য নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন দায়ী। সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে 'অপ্রয়োজনীয়' ও 'মাত্রাতিরিক্ত' বলপ্রয়োগের গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ আছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য 'হুমকি' না হওয়া সত্ত্বেও নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের ওপর 'বেআইনিভাবে' রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, পাখি শিকারে ব্যবহৃত অস্ত্র ও বুলেটসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ৩২ শিশুসহ কয়েক শ মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওএইচসিএইচআর বলছে, আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার সহিংসতার মাত্রাকে তীব্রতর করেছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন যান ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে, যেগুলোতে জাতিসংঘের লোগো ছিল।

বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবির মুখে আন্দোলন ঘিরে এ সহিংসতার ঘটনা স্বাধীনভাবে তদন্তের প্রস্তাব শেখ হাসিনার সরকারকে দিয়েছিল ওএইচসিএইচআর। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাটির সহায়তা নেওয়ার কথা বলা হলেও স্বাধীনভাবে তদন্তের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশন (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওএইচসিএইচআর।

ঢাকার ফার্মগেটে গুলিবিদ্ধ নাফিজকে রিকশায় তুলে দেওয়া হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। ৪ আগস্ট ২০২৪। ছবি: রয়টার্স

আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক তদন্তের জন্য একটি দল পাঠানোর আগে এই প্রাথমিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করল ওএইচসিএইচআর। দেখে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক—

নিহত-আহত

প্রতিবেদন অনুসারে এই তালিকায় আছেন—বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী, শিশু, পথচারী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।

এ ক্ষেত্রে রংপুরে পুলিশের সামনে হাত প্রসারিত করে দাঁড়ানো আবু সাঈদের গুলিতে নিহত হওয়া এবং ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টার সময় তার ওপর সাদা পোশাকে পুলিশের গুলি করার উদাহরণ উল্লেখ করেছে ওএইচসিএইচআর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'হাজার হাজার প্রতিবাদকারী ও পথচারী আহত হয়েছেন, রোগীদের ঢল নামায় হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিতে হিমশিম খায়। নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যার বিষয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম হতে পারে। কারণ কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও চলাচলে বিধিনিষেধ থাকারা কারণে তথ্য সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালগুলোকে নিহত ও আহতদের বিশদ বিবরণ কাউকে না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

৩ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকায় ২৮৬টি ফৌজদারি মামলা

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত শুধু ঢাকায় ২৮৬টি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২ হাজার জনকে শনাক্ত উল্লেখ করে এবং অন্তত সাড়ে ৪ লাখ অশনাক্ত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোতে নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই বিরোধীদলের নেতাকর্মী।

এছাড়া মামলার এফআইআর- এ শত শত ব্যক্তিকে 'অজ্ঞাতনামা' আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি নির্বিচার গ্রেপ্তার কিংবা আটকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

সহিংসতার প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা

প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়। এছাড়া মোবাইল ফোন চেক করে পুলিশের পক্ষ থেকে সহিংসতার প্রমাণ মুছে ফেলার কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া বেশিরভাগ মানুষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি, আইনি সুরক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি, এমনকি তারা কোথায় কীভাবে আছেন, সে তথ্যও পরিবারকে জানানো হয়নি।

মত প্রকাশ ও স্বাধীন চলাচলে বাধা

প্রতিবেদনে ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এবং ৪ ও ৫ আগস্ট সরকারের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রভাব ফেলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকারের ওপরও। তথ্য প্রচারে বাধা দিতে ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে আন্তসমন্বয় বন্ধ করতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে সরকার।

এছাড়া দেশজুড়ে কারফিউ জারি করায় মানুষের স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার ক্ষুণ্নের কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

সবশেষে এ ধরনের ঘটনা তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, নির্বিচার আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং সাম্প্রতিক সব ঘটনায় মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সমন্বিত তদন্তের উদ্যোগ দেওয়ার কথা বলা হয় প্রতিবেদনে; যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার কিংবা অন্য সহিংস বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়।

সেইসঙ্গে আন্দোলনে নির্বিচার বলপ্রয়োগকারী বা নির্দেশদাতার জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ও অন্যান্য রেকর্ডসহ সব ধরনের প্রাসঙ্গিক প্রমাণাদির সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করা হয়।

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা, নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

শুক্রবার রাতে নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মো. পারভেজ নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। 
শেখ হাসিনা ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মো. পারভেজ নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। 

তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া নয়াপাড়ার নুর আহম্মেদ বাড়ির বাদশা মিয়ার ছেলে। গত ১৮ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাকে হত্যা করা হয়। তার সহপাঠী ও বন্ধুরা সেসময় অভিযোগ করেছিলেন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে হত্যা করেছে।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে দায়ের করা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিনজন কাউন্সিলরসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে।

দিনাজপুরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ ৯৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মামলায় বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার আলীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী | ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনায় সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ ৯৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মামলায় বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার আলীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। থানায় মামলা করতে গিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের চাপে চেয়ারম্যান পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।

বোচাগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষ থেকে শনিবার দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার রেল কলোনি এলাকার ফজল আলীর ছেলে ফয়সাল মোস্তাক বাদী হয়ে বোচাগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, মামলার আসামিরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই দুপুরে সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন।

মিছিলটি বোচাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠি, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা চালান। হামলাকারীরা ছাত্রীদেরও শ্লীলতাহানি করেন। পুলিশের হয়রানির কারণে আহতরা অনেকে চিকিৎসাও নিতে পারেননি।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও আফসার আলীর নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলার বাদী ও বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক ফয়সাল মোস্তাক জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা মামলা করতে থানায় আসেন। এ সময় বাসায় হামলার ঘটনায় মামলা করতে থানায় আসেন বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার আলী। ছাত্ররা তাকে থানায় ঘিরে ধরে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে আফসারকে তাদের হেফাজতে নেয়।

পরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় জানিয়ে ওসি বলেন, আফসারকে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে দিনাজপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।