By using this site, you agree to our Privacy Policy.

হাসিনার বিদায়ে ভারত কি চীনের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার মিত্রদের হারাচ্ছে

শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনাফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র শেখ হাসিনার পদত্যাগ নয়াদিল্লির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ পররাষ্ট্রনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইস্ট–ওয়েস্ট সেন্টারের অ্যাজাঙ্কট ফেলো নীলন্থি সামারানায়েক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের ‘দিস উইক ইন এশিয়া’য় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ৫ আগস্ট হাসিনার পদত্যাগ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল করে তুলেছে।

নীলন্থি সামারানায়েক বলেন, নিঃসন্দেহে প্রতিবেশী নেতাদের মধ্যে তাঁর (শেখ হাসিনা) সঙ্গেই নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতম ও সবচেয়ে টেকসই সম্পর্ক ছিল। হাসিনার বিদায় ভারতের জন্য আঞ্চলিক সম্পর্ক খারাপ দিকে মোড় নেওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, বাংলাদেশ এখন এক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগপর্যন্ত এ প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের সমর্থন নেওয়া দরকার হবে।

২০১৪ সালে ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ (নেইবারহুড ফার্স্ট) পররাষ্ট্রনীতির উদ্যোগ নেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ নীতির উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করা।

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের চেয়ে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখাকে প্রাধান্য দিয়েছে।

মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতবিরোধিতা তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচার চালান। নির্বাচনে জেতার পর দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠান। অগ্রসর হন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার পথে।

বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা জোরালো হয়েছে। গত মে মাসে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বলেছে, তারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়া চালাতে আগ্রহী। সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৯–২০২৩ সময়ে চীনা অস্ত্রের দ্বিতীয় বড় গ্রাহক ছিল বাংলাদেশ (১১ শতাংশ), প্রথম ছিল পাকিস্তান।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য আঞ্চলিক কূটনীতিতে কিছু প্রতিবন্ধকতা যোগ করেছে।

শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে অর্থনৈতিক সংকটে দেশটিকে সহায়তা দেয় ভারত। পরে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা জানিয়ে সেখানে চীনের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প আটকে দেয় ও দেশটির গবেষণা নৌযানের উপস্থিতির বিরোধিতা করে ভারত। উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের আগ দিয়ে। তখন মোদি কাচাথিভু দ্বীপের ওপর ভারতের অধিকার দাবি করে রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দেন। ১৯৭৪ সালে দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার কাছে হস্তান্তর করেছিল ভারতের তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার কংগ্রেস।

মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতবিরোধিতা তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচার চালান। নির্বাচনে জেতার পর দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠান তিনি। অগ্রসর হন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার পথে।

নেপালে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত কে পি শর্মা ওলি অতীতে ভারতের সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে এসেছেন তিনি।

আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ দেশের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক বাধার মুখে পড়েছে।

সামারানায়েক বলেন, এসব চ্যালেঞ্জের পরও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ছোট দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যে পুরোপুরি বিবর্ণ হয়ে গেছে তা নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে এখনো সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছে ভুটান।’

যুক্তি-তর্কের দিক থেকে প্রতিবেশী নেতাদের মধ্যে তাঁর (শেখ হাসিনা) সঙ্গেই ছিল নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতম ও সবচেয়ে টেকসই সম্পর্ক। এখন হাসিনার বিদায় ভারতের জন্য আঞ্চলিক সম্পর্ক খারাপ দিকে মোড় নেওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
—নীলন্থি সামারানায়েক, ওয়াশিংটনের ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের অ্যাজাংকট ফেলো

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, শ্রীলঙ্কায় সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির জন্য আরেক অনিশ্চয়তা। নির্বাচনে বামপন্থী এনপিপির (ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার অ্যালায়েন্স) সম্ভাব্য জয় ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে এক উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তা ডেকে আনতে পারে।

এদিকে সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস–ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘স্টেট অব সাউথইস্ট এশিয়া ২০২৪’ শীর্ষক জরিপের তথ্য বলছে, ভারত দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সবচেয়ে কম কৌশলগত অংশীদারদের একটি, যেখানে এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে ধরা হয় চীনকে।

গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালানো এ জরিপে দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় ১০টি দেশের ১ হাজার ৯৯৪ জন অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বলেছেন, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক শক্তি ভারত। বিপরীতে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ চীনের প্রতি সমর্থন জানান।

নেপালে, চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত কে পি শর্মা ওলি অতীতে ভারতের সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে এসেছেন তিনি। আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ দেশের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক বাধার মুখে পড়েছে।

ভারতীয় অর্থনীতিবিদ নাতাশা আগারওয়ালের যুক্তি, প্রতিবেশীদের প্রতি দিল্লির দৃষ্টিভঙ্গি ঔদ্ধত্যপূর্ণ, বিশেষ করে চীনের মতো উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে তার আচরণ দাম্ভিকতাপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তাঁর পরামর্শ, এ অঞ্চলে চীনা উপস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে ভারতকে তার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ পররাষ্ট্রনীতির সমন্বয় ও পুনঃ সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাজারো মানুষ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাজারো মানুষ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

আর ভারতকে এ অঞ্চলে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে তার জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত।

আরও পড়ুন