mariobetbetkommariobet girişbankobetmatadorbetmatadorbet girişmatadorbet twitterbahiscombahiscom girişbahiscom twitterbetkomBetkom twitterbetkommariobetmariobet güncel girişfarkbetmariobetmariobet twitter
১৬ আগস্ট ২০২৪
`

আনুষ্ঠানিক নয়, চাই নিত্যদিনের প্রতিবেশী


বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতের রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলী দাস সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ব্যাপারে বলেছেন, ÔTo us, neighbours come first; Among the neighbours Bangladesh comes first. (The Daily Star, 7.12.2019)। অর্থাৎ ‘আমাদের (ভারত) কাছে প্রতিবেশীগণই প্রথম আর প্রতিবেশীগণের মধ্যে বাংলাদেশ আমাদের সবচেয়ে বেশি কাছের।’ ইতঃপূর্বে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে সফরে এসে ২০১৭ সালে একই ধরনের মন্তব্য করে বলেছিলেন, প্রতিবেশী হিসেবে তাদের কাছে বাংলাদেশই প্রথম বন্ধু। আমরা ভারতের কর্মকর্তাদের এসব আনুষ্ঠানিক আবেগময় বক্তব্য শুনে আনন্দিত হই এবং আশার আলো দেখতে পাই। কিন্তু গত ৪৮ বছরের ঘটনাপ্রবাহ এবং আমাদের অভিজ্ঞতা এসব মধুর বক্তব্যের সাথে মেলাতে গিয়ে বিস্মিত হই।

আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতার বিষয়টি। চিরদিন কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ রাখব। কিন্তু আমরা যে প্রতিবেশী বন্ধু চেয়েছিলাম, বাস্তবে তা কি সত্যিই আমরা পেয়েছি? এ রকম এক আত্মজিজ্ঞাসার মুখে আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি। কারণ স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা বারবার প্রতিবেশীর আচরণে হতাশ হয়েছি। এরই মধ্যে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর প্রায় সব আকাক্সক্ষাই পূরণ করলেও তাদের থেকে আমরা বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এ ধরনের অবন্ধুসুলভ আচরণের শুরু আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের কয়েক বছরের মধ্যেই ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে।

ভারত ১৯৬১ সালে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থেকে ১৬.৫ কিলোমিটার দূরে এবং ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা নামক স্থানে গঙ্গা নদীতে বাঁধ দেয়া শুরু করে। এই বাঁধের মাধ্যমে তারা প্রায় ৪০ কিলোমিটার ফিডার ক্যানেল খনন করে প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার ১০০ কিউবিক মিটার পানি প্রত্যাহার করে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে নেয়ার ব্যবস্থা করে এবং এই পানি দিয়ে ফারাক্কা সুপার থার্মাল পাওয়ার স্টেশন পরিচালনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৭৫ সালে এই বাঁধের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষমূলকভাবে পরিচালনা করার জন্য চুক্তি করে। এ বিষয়ে ১৮ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে দুই প্রতিবেশী দেশের যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কিন্তু সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে ভারত ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাঁধের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে। শেষে ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কূটনীতির মাধ্যমে ফারাক্কা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে আমাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। অন্যদিকে ট্রানজিট ভারতের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমরা সেটা দিতেও কোনো কার্পণ্য করিনি।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত উদারচিত্তে প্রতিবেশী বন্ধু ভারতকে ট্রানজিটের মাধ্যমে তাদের কার্গোগুলো আমাদের দেশের মধ্যে দিয়ে পারাপারের অনুমতি দিয়েছেন। ফলে তাদের কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার থেকে কমে ৮০০ কিলোমিটার হয়েছে। এতে তাদের পরিবহন খরচ টনপ্রতি ৬৭ আমেরিকান ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫ আমেরিকান ডলার। অবশ্য এর জন্য টনপ্রতি আমরা ১৯২.২৫ আমেরিকান ডলার ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করছি (তাহনিয়া কাদের, জার্নাল অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ২৩/৭/২০১৯)। অন্য দিকে বাংলাদেশের আগরতলা থেকে ভারতের ত্রিপুরা পর্যন্ত মাত্র ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ রেললাইন বসানের মাধ্যমে কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব এক হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে কমে হবে ৫১৫ কিলোমিটার (প্রাগুক্ত)।

ভারতের পরিকল্পিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২০০ থেকে ২৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা অববাহিকা থেকে সরে গিয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ শুকনো নদীগুলোতে প্রবাহিত হবে (The Daily Star, 03.12.2015)। এতে আমাদের পানির প্রকৃত উৎস আমাদের দেশের প্রধান প্রধান নদীগুলোতে পানির অভাব দেখা দেবে। কারণ, এই নদীগুলো ভারতের মধ্য দিয়ে এসে ভাটিতে আমাদের দেশে প্রবাহিত হচ্ছে। ‘বাংলাদেশ ওয়াটার রিসোর্স প্লানিং অরগানাইজেশন’-এর(Warpo) মহাপরিচালক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মতে, ‘আমাদের মোট চাহিদার ৭৬ শতাংশ পানি আসে আন্তঃসীমান্ত পানির উৎস থেকে, ২২ শতাংশ আসে বৃষ্টির পানি থেকে এবং শতকরা দুই ভাগ আমরা পাই পাতাল থেকে। তিনি আরো বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ কমে গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের ধান উৎপাদন প্রায় ১৭ শতাংশ কমে যাবে। এ ছাড়াও ৪৫ শতাংশ বসতি অঞ্চল এবং ৫০ শতাংশ মৎস্য উৎপাদন কমে যাবে।’ (প্রাগুক্ত)।

এ ব্যাপারে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের নদীগুলোতে পানি প্রবাহ কমে যাবে ফলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন কমে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল শরিফ জামিল বলেন, গঙ্গা অববাহিকা থেকে পানি প্রত্যাহার করলে আমাদের পদ্মা নদীতে পানি সঙ্কট দেখা দেবে এবং লবণাক্ততার কারণে আমাদের সুন্দরবন ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে (ঞযব উধরষু ঝঃধৎ, ১২.০৯.২০১৭)।

তিস্তা নদীর পানি বাংলাদেশের জন্য একটি জীবনমরণ সমস্যা। বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নদীটি ভারতের সিকিম থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণ করে এককভাবে ৮৫ শতাংশ পানির গতি পরিবর্তন করে সংযোগ খালের মাধ্যমে গঙ্গা নদীতে ফারাক্কার উজানে প্রবাহিত করছে। আর এই পানি দিয়ে ভারত বর্তমানে এক লাখ হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু ভারতের এই সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২১ মিলিয়ন মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু তিস্তা অববাহিকায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আট মিলিয়ন এবং সিকিমের অর্ধেক মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে।

সব মিলিয়ে তিস্তা অববাহিকায় বাংলাদেশ ও ভারতের জনবসতির অনুপাত হলো ৭০ : ৩০ (ঞযব উধরষু ঘবি অমব, ২৫.০৫.২০১৯)। কাজেই এই তিস্তা নদীর পানির সমানুপাতিক ভাগের দাবি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের। গত ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় এই তিস্তা চুক্তির খসড়া স্বাক্ষরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিস্তা নদী সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির অজুহাতে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে ভারত সরে আসে এবং শিগগিরই এই চুক্তি করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। অদ্যাবধি ভারত তাদের অঙ্গীকার মোতাবেক তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করেনি। অথচ সম্প্রতি ভারত তিস্তা চুক্তির ধারেকাছে না এসেই বরং ফেনী নদীর পানি আমাদের কাছ থেকে আদায় করে নেয়।

কিন্তু ভারত ১৯৮২ সাল থেকে ২০০২ সালের মধ্যে শিলছড়ি ও দক্ষিণ ত্রিপুরার আমলিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় ৩৬টি পাম্প হাউজ নির্মাণ করে ফেনী নদীর পানি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ করা হলেও ভারত তাতে কর্ণপাত করেনি। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বাদে বাকি ১০ মাসই ভারত এই পানি উত্তোলন করে নেয়। এতে আমাদের মিরসরাইয়ে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুহরী সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ০৭.১০.২০১৯)।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা দীর্ঘদিন শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী তৎপরতায় আক্রান্ত হয়েছি। এতে আমাদের দেশের অপূরণীয় জনবল ও অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। সেখানে রক্ত ঝরেছে দীর্ঘদিন। পরবর্তীকালে ১৯৯৭ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার প্রথমবার প্রধান মন্ত্রিত্বের সময় পাহাড়িদের সাথে একটি দূরদর্শী চুক্তির মাধ্যমে সেখানে শান্তি আনয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই চুক্তির ফলে পাহাড় আজ প্রায় শান্ত হয়ে এসেছে। কিন্তু ওই শান্তিবাহিনীর একার পক্ষে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সঙ্ঘাতে জড়ানো সম্ভব ছিল না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘The New York Times’ প্রকাশ করেছিল, ‘Bangladeshi Insurgents Say India Is Supporting Them.Õ (Sanjoy Hazarika : The New York Times, June 11, 1984, Sec 1, page- 03)।

বাংলাদেশের রামপাল নামক স্থানে একটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের জন্য ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভিলপমেন্ট বোর্ড’ (ইচউই) এবং ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোঅপারেশন’ (NTPC)-এর মধ্যে ১.৬৮ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার ব্যয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ স্থাপনাটি আমাদের সুন্দরবন থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্ত ভারত তাদের নয়াচরে থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান নির্মাণ থেকে সরে এসেছিল কারণ, নয়াচর সুন্দরবনের তাদের অংশ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। শুধু ১৯৭৩ সাল ব্যতীত প্রতি বছরই বিএসএফ অনেক বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশী মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ একটি গবেষণায় প্রকাশ করেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট চার হাজার ১৩৮ জন বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করেছে (তাহনিয়া কাদের, ১৩ জুলাই ২০১৯, হানকুক বিশ্ববিদ্যালয়)। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতর হত্যার শিকার হয়েছে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশী বালিকা ফেলানী। পরিবারের সদস্যদের সাথে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ফেলানীর জামা কাঁটাতারে আটকে যায়। এ অবস্থায় BSF সদস্যরা তাকে গুলি করে। ফেলানীর গুলিবিদ্ধ লাশ চার ঘণ্টা কাঁটাতারে উপুড় হয়ে ঝুলতে থাকে।

মৃত্যুর আগমুহূর্তে সে পানি চেয়েছিল। কিন্তু তাকে একফোঁটা পানিও দেয়া হয়নি। ১৫ বছরের এই দরিদ্র তরুণী হত্যার বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। তার হত্যার প্রধান আসামি বলে পরিচিত ১৮১ ইঝঋ ব্যাটালিয়নের অমিয় ঘোষ এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ‘সাধারণ নিরাপত্তা বাহিনীর’ আদালত দু-দু’বার নির্দোষ ঘোষণা করেছে (উযধশধ ঞৎরনঁহব, ৭.১.২০১৯)। যে কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে ফেলানী নিহত হয় সেই কাঁটাতারের বেড়া ভারত প্রায় সারা সীমান্তজুড়ে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশেকে ঘিরে। প্রতিবেশী হিসেবে সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীর কাঁটাতারের বেড়া আমাদের জনগণকে নিশ্চয়ই আনন্দিত করতে পারছে না।

সাংস্কৃতিক যোগযোগের জগতেও আমরা প্রতিবেশীর দ্বারা বৈষম্যের শিকার। ভারত প্রায় সব আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল তাদের অভ্যন্তরীণ কেবল নেটওয়ার্কে স্বাগত জানালেও বাংলাদেশী চ্যানেলের প্রবেশের ব্যাপারে তারা কঠোর মনোভাব ধরে রেখেছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ অত্যন্ত উদারনৈতিকভাবে ভারতের প্রায় সব চ্যানেল প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে (http://www.quora.com, আশিকুজ্জামান কিরন, ২১.১০.২০১০)।

রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আমাদের দেশের জন্য মরা-বাঁচার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই ব্যাপারে ভারতের কাছে আমরা ন্যূনতম সহযোগিতাটুকু পাইনি। প্রতিবেশী হিসেবে যদি বাংলাদেশই প্রথম হয়, তবে এই গুরুতর বিপদের সময় ভারত কেন বাংলাদেশের পরিবর্তে মিয়ানমারকেই প্রথম প্রতিবেশীর মতো তাদের পক্ষাবলম্বন করেছে। আশ্রিত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা আমাদের পরিবেশ, অর্থনীতি, নিরাপত্তা সব বিষয়েই মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অকৃত্রিম মহানুভবতায় তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু এই আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীই আমাদের জন্য এখন মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন দুর্যোগের দিনে আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার সফরে গিয়ে সন্ত্রাসীদের আক্রমণে মিয়ানমারের ১২ জন নিরাপত্তা সদস্যের হত্যাকাণ্ডের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মাত্র। কিন্তু আমাদের বারবার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েও এদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিন্দুমাত্র সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি, যা আমাদেরকে শুধুই হতাশ করেছে প্রতিবেশীর বন্ধুত্বের ব্যাপারে।

পেঁয়াজ নিয়ে আমরা সম্প্রতি স্মরণকালের ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। প্রতিবেশী বন্ধু ভারত আমাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পেঁয়াজ সরবরাহকারী দেশ। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ করেই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে আমাদের দেশে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে কেজিপ্রতি প্রায় ২৫০ টাকা হয়ে যায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালীন সময়ে এই বিষয়টি উত্থাপন করলেও বন্ধুদের মন গলেনি। পেঁয়াজ নিয়ে তাদের সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু এভাবে হঠাৎ রফতানি বন্ধ করে না দিয়ে একটি আগাম সতর্কতা আমরা প্রতিবেশীর কাছ আশা করতেই পারি, যাতে করে আমরা পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে সময়মতো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতাম।

প্রতিবেশী বন্ধুর কাছ থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি তাদের NRC বা নাগরিকপঞ্জি এবং CAB বা নাগরিকত্ব সংশোধিত বিল নিয়ে। ভারতের ঘজঈ যদিও তাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় কিন্তু এতে আমরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ঘজঈ-এর প্রভাবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নিগৃহীত বাংলাভাষী মুসলমান মানুষগুলো দলে দলে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এসব মানুষ কোন দেশের নাগরিক, তা যাচাই না করেই নির্বিচারে তাদের বাংলাদেশী নাগরিক বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং বন্দিশিবিরে আটকসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে শুধু বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান হওয়ার কারণে।

ফলে তারা নিরাপদ গন্তব্যের সন্ধানে পালিয়ে সীমান্তের চোরাপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ দিকে বন্ধু দেশের স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সমস্ত বাংলাভাষী মুসলমানদের ‘উইপোকা’ বলে কটাক্ষ করেছেন। আসলে বাংলাদেশী অভিবাসীদের নিয়ে ভারতের ধারণা বিভ্রান্তিমূলক। ২০০৯ সালে ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ২৫ হাজার লোক ভারতে গিয়ে আর ফেরে না। তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাজ্যসভায় ২০১৬ সালে বলেছিলেন, মোট দুই কোটি বাংলাদেশী অভিবাসী ভারতে অবস্থান করছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ২০১৮ সালের তাদের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতার জন্য অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের দায়ী করেছিলেন।

CAB বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের সম্প্রীতির মধ্যে আবারো বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান এ তিনটি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সেখানে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত ও নির্যাতিত।’ (দৈনিক প্রথম আলো: ১১/১২/২০১৯)। কিন্তু কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে কোনো দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা সে দেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার। এ ব্যাপারে অন্য দেশের কোনো ধরনের মন্তব্য সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। তাছাড়া বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বিশ্বসভায়। এখানে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন দাপটের সাথেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কাজেই এখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ কেবলই অপবাদ মাত্র।

অন্য দিকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে একই কাতারে শামিল করা অদূরদর্শিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। পাকিস্তান ভারতের চিরবৈরিতা দৃশ্যমান হলেও বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুত্ব চিরদিনের বলে আমরা মনে করতে চাই। কাজেই ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে একই ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করা ভারতের কোনো দায়িত্বশীলের পক্ষে সুবিবেচনার কাজ হতে পারে না। এর অনেক অব্যক্ত তাৎপর্য থাকতে পারে। সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী হলেও মুসলমান অধ্যুষিত হওয়র কারণেই কি তাহলে একটি বন্ধু প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে বৈরী মনোভাব প্রকাশ করা হচ্ছে? এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে কয়েক দিন আগে কলকাতায়।

সেখানে বাংলাদেশের জনৈক ক্রিকেটার তার ভিসার মেয়াদের অতিরিক্ত কয়েক দিন ভারতে অবস্থান করায় ২১ হাজার রুপি জরিমানা দিয়েছেন, যেখানে একজন অমুসলিমের জন্য মাত্র ১০০ রুপি দিতে হয়। গত প্রায় এক বছর আগে এই জরিমানার বিধান ভারত চালু করে যাতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে কোনো সংখ্যালঘু বা অমুসলিম নাগরিক ভিসার মেয়াদ ৯০ দিন পর্যন্ত অতিক্রান্ত করলে ১০০ রুপি জরিমানা দেবে আর একই দেশের একজন মুসলমানের একই অপরাধে জরিমানা গুনবে ২১ হাজার রুপি। (নয়া দিগন্ত : ১২/১২/২০১৯।

স্বাধীনতার মাসে এ ধরনের লেখা লিখতে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যে ভারত আমাদেরকে আশ্রয় দিয়ে সার্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করে তাদের সৈনিকের রক্তে রঞ্জিত করার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ আহরণকে ত্বরান্বিত করেছিল, তাদের মাধ্যমেই প্রাপ্ত কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উচ্চারণ করা বেশ কষ্টদায়ক। কিন্তু ভারত আমাদের প্রতিবেশী এবং সবচেয়ে কাছের আঞ্চলিক বন্ধু।

তাই আমরা চাই, বন্ধুর সহমর্মিতা ও প্রকৃত প্রতিবেশীর মর্যাদা। বন্ধুত্বের মধ্যে ছোট বা বড় কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। বিবেচ্য হলো মর্যাদার সমতা এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা। আর সেই অবস্থায় আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্ব পৌঁছতে পারলেই আমরা বিশ্বাস করব এবং বলতে পারব ‘প্রতিবেশীই প্রথম এবং ভারতের কাছে প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম।’

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ

mariobetbetkommariobet girişbankobetmatadorbetmatadorbet girişmatadorbet twitterbahiscombahiscom girişbahiscom twitterbetkomBetkom twitterbetkommariobetmariobet güncel girişfarkbetmariobetmariobet twitter
up