By using this site, you agree to our Privacy Policy.

সমমর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে কিছু হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। সেনাপ্রধান বলেছেন, ২০টি জেলায় ৩২টি জায়গায় সংখ্যালঘুদের নিয়ে কিছু অরাজকতা হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ৫০টির বেশি জেলায় কয়েক শ হামলার ঘটনা ঘটেছে। কারা এই হামলার কুশীলব, এর পেছনে কী রাজনীতি কাজ করেছে, সেসব নিয়ে কূটতর্কের চেয়েও জরুরি হলো সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

যেকোনো রাজনৈতিক পালাবদল ও দুর্যোগে সংখ্যালঘুরাই আক্রমণের শিকার হন—সে হোক ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু। অন্যান্যবার যেমনটি দেখা গেছে, আক্রমণের মুখে সংখ্যালঘুরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতেন, অনেকে দেশত্যাগ করতেন। এবার তাঁরা সেটি করেননি। বরং শুরু থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষেরা প্রতিবাদ করেছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা আট দফা দাবি পেশ করে বলেছিলেন, হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আশ্বাসে তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে সেখানে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি সব ধর্ম ও গোত্রের ব্যবধান ভুলে বাংলাদেশের সব মানুষকে একটি পরিবারের সদস্য হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি কতটা বৈষম্য করা হচ্ছে বা সেখানে তারা কতটা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, সেই উদাহরণ কোনোভাবেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি হামলার ঘটনাকে ন্যায্যতা দিতে পারে না। বিশ্বের যেকোনো দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হয়রানির ঘটনার ব্যাপারে আমরা যেমন সোচ্চার, তেমনি এখানে যেন তেমন কিছু না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকা আমাদের দায়িত্ব।

সংখ্যালঘুদের ওপর এবারের হামলার ঘটনাকে অনেকেই রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন। কিন্তু আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর যে দমন–পীড়ন চালিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগে সংখ্যালঘু বা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, কারও ওপরই হামলার সুযোগ নেই। কেউ অন্যায় বা জুলুম করে থাকলে আইনিভাবেই তার প্রতিকার চাইতে হবে। আমরা আশা করি, এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা পাওয়া যাবে। কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার দুঃখজনক ঘটনার মধ্যে এবার দৃশ্যমান যে পরিবর্তনটি দেখা গেছে তা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় পাহারা দিয়েছেন। এমনকি ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও পিছিয়ে ছিলেন না। এটা আশার কথা। কোনো দেশেই কেবল আইন দিয়ে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া যায় না, সামাজিক সম্প্রীতি ও নাগরিক সুরক্ষায় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হয়।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিযোগ, অতীতে তাদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, কোনো সরকারই তার বিচার বা প্রতিকার করেনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে এসেছে। আশা করি, তিনি ধর্ম-গোত্রনির্বিশেষে সব মানুষকে এক পরিবারের সদস্য হতে যে বাধাগুলো বিদ্যমান আছে, তা দূর এবং প্রতিটি ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেবেন। সংখ্যালঘুদের আইনি সুরক্ষার পাশাপাশি সমমর্যাদার নিশ্চয়তাও দিতে হবে রাষ্ট্রকে।