বিশেষ সাক্ষাৎকার

আমি মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

‘মানুষ এই সরকারকে আর বিশ্বাস করে না’
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যা ঘটেছে, এতে কেমন বোধ করছেন? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি, এরকম নিষ্ঠুর ঘটনা কোথাও ঘটেনি। ব্রিটিশ পাকিস্তানেও ঘটেনি, একাত্তর ছাড়া বাংলাদেশেও ঘটেনি। আমি মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ।

ডেইলি স্টার: হাজারো মানুষ যুক্ত হয়েছে এই আন্দোলনে। প্রতিদিন পত্রিকায় নতুন নতুন মৃত্যুর খবর আসছে। এগুলো দেখার সুযোগ হয়েছে আপনার? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: হ্যাঁ, পত্রিকার পাতায় নিয়মিত চোখ রাখছি। টিভিতে সেরকম কিছু নেই। কিছু পত্রিকা ভালো ভূমিকা রাখছে, লিখছে। এর মাঝে যা দেখলাম, বলা যায়- আগের সব গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে এবারের অভ্যুত্থান ভিন্ন। এবার অনেক ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যুক্ত হয়েছে। মানুষ ব্যাপকভাবে হয়রানিও হচ্ছে। সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে অনেক। পথে-ঘাটে নির্বিচারে গুলি করা হয়েছে। এই ক্ষত অনেক দিন থাকবে।

ডেইলি স্টার: নিহত অনেকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছে সরকার, কিন্তু শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ক্ষমা চাওয়া...

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এগুলো হাস্যকর কাজ। মানুষ বুঝে এসব। এত মানুষ মারা গেছে তার খবর নেই, স্থাপনার কথা বারবার আসছে। মানুষের মৃত্যুতে কাঁদে না। স্থাপনা দেখে কাঁদে। তাহলে স্থাপনা পোড়ার সময় পুলিশ বাহিনী কোথায় ছিল? সেখানে তো একজন মানুষও মারা যায়নি।

ডেইলি স্টার: অনেক ক্ষতির পর রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করেছেন। হাসপাতালে দেখতে গেছেন...

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: শামসুর রাহমানের একটা কবিতা আছে, 'সরকারি প্রেসনোটের মতো মিথ্যা তোমার প্রেম'। মানুষ এই সরকারকে আর বিশ্বাস করে না, তিনি যাই করেন, সন্দেহ করবেই। 

ডেইলি স্টার: একজন সাবেক বিচারক টেলিভিশনে বলেছেন, পুলিশের গুলি করা ঠিক আছে। অন্যদিকে মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, পুলিশকে গুলি করতে সরকার বলেনি...

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সংবিধানের কোথাও নেই যে, এই পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারবে। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে আবু সাঈদকে। আবার তার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী টাকা দিচ্ছেন, এটা তো অনেকটা ' জুতা মেরে গরু দান'র মতো অবস্থা।

ডেইলি স্টার: এত প্রাণহানি। এটা কি এড়ানো যেত? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তাদের ভেতরটাই এমন। এড়াবে কী করে? একে রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতাও বলব না, এটা তাদের মানসিকতা। যা তারা চেপে রাখতে পারেনি। বাইরে বেরিয়ে এসেছে। গতকাল দেখলাম ওবায়দুল কাদেরকে ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারাই ভুয়া ভুয়া বলে চেঁচাচ্ছিল, যার কারণে সে সভা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। তাদের নিজেদের দলের অবস্থাও ভালো না।

ডেইলি স্টার​​​​​​​: ​​​​​​​যাকে-তাকে ধরছে পুলিশ। এত হামলা, মামলা, ভয়। কোন দিকে যাচ্ছি আমরা?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা কোন দিকে যাচ্ছি তা বুঝতে পারছি না। তবে এটা বুঝতে পারছি যে, বিরাট একটা ধাক্কা লাগছে। মানুষের স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে বা পারবেও না স্বাভাবিক হতে। ভালো হতে কে কাজ করবে? আমাদের রাষ্ট্র জনগণের স্বার্থ দেখে না, স্বার্থ দেখে কতিপয়ের। এ রাষ্ট্র জনমতের তোয়াক্কা করে না। বুর্জোয়ারা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে, হবে। আমাদের এখানকার বুর্জোয়ারা বেশি খারাপ। এইখানে পুঁজিবাদ যে ফ্যাসিবাদের আকার ধারণ করেছে, তা না থামার কারণ বলার কেউ নেই।

‘জনগণ জাগলে কোনো অপশক্তিই তাকে পরাজিত করতে পারে না’

‘ঈদের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর, এটা কেউ মন দিয়ে অনুভব করে না’
আবুল কাসেম ফজলুল হক। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষাবিদ, সমাজ-বিশ্লেষক ও চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক। জন্ম ১৯৪০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ চার দশক। পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে চলছেন এখনো। 

তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্বদেশ চিন্তা সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রাষ্ট্রচিন্তা পরিব্যাপ্ত হয়েছে জাতীয়তাবাদ থেকে আন্তর্জাতিকতাবাদ পর্যন্ত।

সময়ের গুরুত্বপূর্ণ এই চিন্তকের মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫০টির বেশি। তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। গত ১০ জুন ঢাকার পরীবাগের বাসায় সমাজ, শিক্ষা, রাজনীতি ও গণতন্ত্রসহ বিবিধ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

উপাচার্য-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এরকম ঘটনা দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপরেও। এর পেছনের কারণ কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: উপাচার্য-শিক্ষক দুই গোষ্ঠীই অন্যায় করে করছে। দুই পক্ষই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন সংকট তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরা সবাই স্বার্থ, পদ ও ক্ষমতার জন্য দলাদলি করে। কখনো ভিসির পক্ষে লোক বেশি হয়, কখনো শিক্ষক সমিতিতে। যখন যার পক্ষে লোক কম থাকছে তারা চাপে পড়ছে। আর তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান।

এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে সরকারি দল তথা সরকার। তারা তাদের কর্তৃত্ব সীমিত রাখতে পারে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সরকার কর্তৃত্ব করবে। কিন্তু এটা করতে হবে বিধির মধ্যে থেকে। আইনের বাইরে গিয়ে না।

আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে অনেক কথা বলতে শোনা যায়। বলা হচ্ছে—ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই বলে গতিহীন হচ্ছে মৌলিক ছাত্র রাজনীতি। আপনিও কি তাই মনে করেন?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ১৯৭২ সাল থেকে এই সংকট শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেনি। তারা সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো হয় এমন উল্লেখযোগ্য কাজ হয়নি।

স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর— এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতে দেয় না সরকার। নানা কায়দায় হস্তক্ষেপ করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সেভাবে ঠিক থাকে না।

আর ছাত্রদের দিয়ে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করানোর জন্যই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হয় না। এক কথায় আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের কথা কেউ চিন্তা করে না।

আবরারের ঘটনায় বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো। ক্ষমতাসীনরা সেখানে আবার ছাত্র রাজনীতি চালু করতে চায়। এই ছাত্র রাজনীতি দিয়ে দেশের কি হবে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: বর্তমানে যে ছাত্র রাজনীতি চালু আছে তা দিয়ে আগামীতে সুস্থ-স্বাভাবিক রাজনৈতিক নেতা তৈরি হবে না। প্রকৃত ছাত্রনেতা তৈরি হবে নির্বাচনের মাধ্যমে, তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে সচেতন শিক্ষকরা। চর্চা করবে সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাষ্ট্র নিয়ে করবে পড়াশোনা, নানা বিষয়ে আয়োজন করবে বিতর্ক। 

কিন্তু বর্তমান ছাত্র রাজনীতিতে সে চর্চা হয় না। শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই শিক্ষার্থীদের, বরং কিছু শিক্ষক ছাত্রদের গুণ্ডামিতে প্রশ্রয় দেয় নিজেদের সুবিধার জন্য। আর ছাত্ররা সেভাবেই চলে এবং তারা কেবল বড় দলের হয়ে কাজ করে। এভাবে লেজুড়বৃত্তির রাজনৈতিক চর্চা অস্বাভাবিক পরিবেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের এবং তাদের।

দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে। এই রাজনীতি দেশকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: এটাকে বলা যায় মহাজনের রাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক দিন ধরেই অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে। একদল বড় থেকে আরও বড় হচ্ছে। অর্থের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেতারা লিপ্ত। কারও মধ্যে দেশ নিয়ে ভাবনা-ভালোবাসা নেই। কৃষক সারাদিন পরিশ্রম করে অল্প ভোগ করতে পারে, বাকিটা ছেড়ে দিতে হয়। নেতারা গরীব মানুষের জীবনকে রীতিমতো ভোগ করে।

বাস্তবতা হচ্ছে ভালো-মন্দ মিলিয়ে আওয়ামী লীগই বেশি শক্তিশালী এবং মনে হচ্ছে তারা আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকবে। তাদের হাতে সুযোগ আছে পরিবর্তনের এবং সেটা কেবল পারবে শেখ হাসিনা। তার মতো ক্ষমতা দেশে আর কারও নেই।

অনেক বাবারা সন্তান হারিয়ে বিচারের দাবিতে ঘুরছেন। আপনি নিজ সন্তান হারিয়ে কেন বিচার চাইলেন না?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আমি কেন বিচার চাইব? আমার সন্তান দীপন কি ব্যক্তিগত কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে? পারিবারিক কারণে খুন হয়েছে? এমন হলে আমি বিচার চাইতাম।

আমার সন্তানকে মুক্তবুদ্ধি-চর্চার জন্য হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে বিচারের দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের। আমি না চাইলেও তো রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন করবে। আইনকে গতিশীল রাখবে।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তরুণদের একটা বড় অংশ এর প্রতিবাদ করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

আবুল কাসেম ফজলুল হক: হাইকোর্ট রায় দিলেই সে বিষয়টা ন্যায়সঙ্গত হবে এমনটা মনে করার কারণ নেই। মনে রাখতে হবে একাত্তরে যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা কখনো কোনো কিছুর বিনিময়ে চাননি। মানে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল হবে এমন চিন্তায় মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তথাপি স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার শহীদ পরিবার এবং আহতের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কোটা চালু করে। পারিবারিক সংকট তথা এক ধরনের নিরাপত্তার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। কোটার রেওয়াজ দীর্ঘস্থায়ী হবে— এমনটি অপ্রত্যাশিত।

তারপরও মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানের জন্য কোটার সুবিধা মানা যায়। কিন্তু ছেলে-মেয়ের ঘরে নাতির সুবিধা বেমানান। এতে সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে। অনাদিকাল ধরে এই কোটা পদ্ধতি চলতে পারে না। এতে যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, স্বাধিকার, স্বনির্ভরতা চেয়েছেন— তাদের আত্মাও কষ্ট পাবে।

জাতীয় নির্বাচনের পরে উপজেলা নির্বাচন নিয়েও ভোটারদের তেমন উৎসাহ দেখা গেল না। গণতান্ত্রিক একটা দেশে এমন ভোট বিমুখতা কী বার্তা দেয়?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র নেই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ কীভাবে হবে? এমন নির্বাচনে জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা কেন থাকবে? গণতন্ত্র আশা করলে তার একটি ধারাবাহিক চর্চা থাকতে হবে। এরপর এর ফল আসবে ধীরে ধীরে।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষেরও কোনো আওয়াজ নেই। তারা ঘুমন্ত। মনে রাখতে হবে ভোগবাদী ও সুবিধাবাদী নেতৃত্বের দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন কিংবা জাতীয় সমস্যার সমাধান হবে না। বরং নেতৃত্বের সংকটে পড়বে আগামী।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে মোদি সরকার ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে ভারতের জাতীয় নির্বাচনেও। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রকৃত অর্থে তরুণ কিংবা প্রগতিশীল প্রজন্ম কখনোই গ্রহণ করে না।

তার উদাহরণ ভারতের এবারের নির্বাচন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে সেখানকার তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি তাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের জন্য শিক্ষা। আমাদের জন্যও বটে।

বাংলাদেশ বস্তুত কোন দিকে যাচ্ছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আমরা খুব খারাপ সময় পার করছি। সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিক্ষা সবখানেই সংকট। কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সবাই চুপ। মিডিয়া কেবল প্রশংসা করে, উন্নয়ন দেখে। ব্যবসায়ী মালিক যেভাবে বলে সাংবাদিকরা সেভাবে চলে। নিজেদের কোনো বিবেচনা নেই।

দুয়েকটি পত্রিকা কিছু লেখে, বলে। সেগুলোর কোনো প্রভাব নেই, উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া নেই। কার্যকারিতা নেই সমাজে।

আমি মনে করি জনগণের জেগে ওঠা উচিত। আমরা দেখেছি জনগণ যখন বিবেকবুদ্ধি দিয়ে সংঘবদ্ধ হয়েছে তখন সেই শক্তির সামনে কোথাও কোনো অত্যাচারী শাসক, কোনো যুদ্ধবাজ শক্তি টিকতে পারেনি। কেননা জনগণ পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। জনগণ জাগলে কোনো অপশক্তিই তাকে পরাজিত করতে পারে না।

ঈদ কী সবার মাঝেই সমান হয়ে আসে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: না, বাজারের কারণে মানুষের মনে আনন্দ নেই আর। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে তারা কী খাবে, কীভাবে চলবে? লোক দেখানো কোরবানি করে অনেকে। কিন্তু প্রতিবেশীর প্রতি খেয়াল রাখে না, যেভাবে রাখে না রাষ্ট্র। অথচ ঈদের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। এটা কেউ মন দিয়ে অনুভব করে না।

The Daily Star  | English

Interim govt wants ICT trial of killings during student protests: Asif Nazrul

The government is also trying to ensure that ICT investigators work under the supervision of United Nations, he says

12m ago

ভয়ের চাদরে আবৃত সারা দেশ: মেজর হাফিজ

‘সমালোচনা করা সাধারণ একটা ব্যাপার। বিরোধীদলের প্রথম কাজই হলো সরকারের সমালোচনা করা। আর এগুলোই এখন দণ্ডনীয় অপরাধ।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল বিএনএমে যোগদান করার কথা ওঠে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে।

দলটিতে যোগদান না করা নিয়ে, নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া এবং বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশসহ সাম্প্রতিক বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি বিএনপি। কিন্তু বিএনপি ভাঙছে, এমন আলোচনা যখন আসে, সেখানে আপনার নাম আলোচনায় আসে। আপনার নাম আসে কেন?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ: বিএনপি যদি ভাঙত, তাহলে তো নির্বাচনের আগেই ভেঙে যেত। এখন তো ভাঙার কোনো কারণ নেই। আমার নাম এসেছে কারণ, আমি কিছু কিছু জায়গায় দলের মৃদু সমালোচনা করেছি। যেমন দলের কাউন্সিল হয় না, দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই—এসব কথা আমি প্রকাশ্যে বলেছি, পত্র-পত্রিকায় উঠেছে। এজন্য সবাই ধরে নিয়েছে নিশ্চয়ই আমি দল ছাড়ব। আমি ৩২ বছর এই দল করি, দল ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।

আর নির্বাচনের আগে দল ছাড়লে এখন শাহজাহান ওমর, তৈমুর আলম বা শমসের মবিনের যে অবস্থা হয়েছে, তেমন হবে। সেটা হবে যে, দুঃসময়ে দল ছেড়ে যাওয়াটা মানুষ পছন্দ করবে না। আমার ওপরেও প্রচণ্ড চাপ ছিল। তবুও আমি আমার দলের প্রতি অনুগত, নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগত।

ডেইলি স্টার: 'চাপ' ছিল বললেন। সবাই বলে 'চাপ' ছিল। কিন্তু 'চাপ'র বিষয়টা কেউ পরিষ্কার করে না। 'চাপ' আসলে কী?

হাফিজ উদ্দিন: সেটা পরিষ্কার করলে জেলে যেতে হবে, গুম হতে হবে। এসব কারণেই কেউ পরিষ্কার করে না। আমিও করব না।

ডেইলি স্টার: তার মানে আপনিও ভয় পাচ্ছেন?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ, ভয়ার্ত পরিবেশে ভয় না পেয়ে তো উপায় নেই। এই যে আমি জেলে গেলাম, আমাকে তো ডিভিশন দেয় নাই। কোর্ট থেকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেল অথরিটি দেয়নি।

ডেইলি স্টার: জেলে জীবনটা কেমন ছিল?

হাফিজ উদ্দিন: জেলের ভেতরে একটা হাসপাতালে রেখেছিল আমাকে। জেলের মধ্যে তো সব বিএনপির লোক থাকে। তারা আমার অনেক খাতির-যত্ন করেছে। আমার পায়ে ব্যথা ছিল, আরেকজনের কাঁধে ভর দিয়ে টয়লেটে যেতে হয়েছে। রাত ২-৩টার দিকেও লোকজনের কাঁধে ভর দিয়ে টয়লেটে গিয়েছি।

ডেইলি স্টার: এই ভয় পাওয়ার মধ্য দিয়েই কি চলতে হবে?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ, এই ভয়ের আবহেই চলবে। আমাদের একজন প্রতিমন্ত্রীকে তো গুম করে ভারতে নিয়ে গেল। এটা তো একটা নতুন ডাইমেনশন। গুম করে দেশে রাখে বা লাশ নদীতে ভাসায়ে দেয়। কিন্তু একদম ভারতে নিয়ে গেল, এটা কীরকম কথা! এখন প্র্যাক্টিক্যালি দেশে তো শক্তিশালী বিরোধীদল নেই। যা আছে, বিএনপি মিটিং করতে পারে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যা মামলা। সেসব মামলায় আবার দণ্ডও দেওয়া হচ্ছে। এত প্রতিকূলতায় তো রাজনীতি করা যায় না। সরকারের এসব প্রতিরোধ করার মতো কেউ নেই।

ডেইলি স্টার: তার মানে ভয়ের পরিবেশ স্থায়ী হয়ে গেল?

হাফিজ উদ্দিন: এটা এভাবেই চলবে। ধীরে ধীরে এটা আরও বাড়বে। সবাই মুখ বন্ধ করেছে। আপনি যেটা অনুভব করেন, সেটা কি আপনার পত্রিকায় লিখতে পারবেন? দেশের এই দুরাবস্থা। এটা কেউ পারবে না। ভয়ের চাদরে আবৃত সারা দেশ।

ডেইলি স্টার: আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৫৩ বছরের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে এখন আপনার মতো একজন রাজনীতিবিদ ভয়ে কথা বলছেন না। এটা ঠিক কেমন বাংলাদেশ হলো তাহলে?

হাফিজ উদ্দিন: এটাই তো, বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বর্তমান শাসক দল। আগেও ছিল কমবেশি অন্যান্য দলের আমলে। কিন্তু এই দলের আমলে একেবারেই মানুষ কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। এই যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এটা তো এরাই পাস করেছে। আমি যদি এখন বলি যে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্র চালাতে ব্যর্থ, তাহলে আইনগতভাবেই আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে। অথচ সমালোচনা করা সাধারণ একটা ব্যাপার। বিরোধীদলের প্রথম কাজই হলো সরকারের সমালোচনা করা। আর এগুলোই এখন দণ্ডনীয় অপরাধ।

ডেইলি স্টার: আবার দল ভাঙার প্রসঙ্গে আসি। বিএনএমের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। আবার বিএনএমের নেতা ব্যারিস্টার সারোয়ার বললেন, আপনি যা বলছেন সেটা সত্য নয়। কেউ কেউ বলছেন আপনি যা বলছেন, গোপন করছেন তারচেয়েও বেশি।

হাফিজ উদ্দিন: এখন অনেকের তো পাবলিসিটি দরকার। যাদের কোনো দল নেই, কিছু নেই, কিছু একটা বললেই তো পত্রিকা, ইউটিউব সব জায়গায় প্রচার পাবে। এই পাবলিসিটির লোভেই এরা এসব কল্পকাহিনী ছড়াচ্ছে। প্রেস কনফারেন্সে আমি প্রকাশ্যে বলেছি, নির্বাচনের দুই মাস আগে আমি বলেছি যে দল ছাড়ব না। নতুন কোনো দলে আমি যাব না। দুই মাস তো দীর্ঘ সময়। তারপরেও ছয় মাস পরে এসে এসব কথা উঠছে কেন। এরা পাবলিসিটি চায়!

ডেইলি স্টার: বলা হয় বিএনএমের রেজিস্ট্রেশন আপনি করে দিয়েছেলে, নাম ঠিক করে দিয়েছেন আপনি।

হাফিজ উদ্দিন: না। এই অভিযোগ সত্য নয়। এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এগুলো কারা করে, সেটা তো আপনারা সবাই জানেন। সরকারের কোন সংস্থা এগুলো করে, সেটা সবাই জানে। বিএনএমটা গঠন করেছিল সামরিক বাহিনীর ৪-৫ জন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। অবসরপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমার জানা-শোনা আছে, অনেকে আমার বাসায় আড্ডা দিতে আসে, তারা কয়েকদিন পরপর এসেই 'স্যার, জয়েন করেন' বলে। আমি বলি, আচ্ছা দেখি কিংবা না ভাই যাব না। এসব আরকী।

ডেইলি স্টার: সাকিব আল হাসানের বিষয়টিও কি একই রকম?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ। সাকিব আল হাসানকে তারা বুঝিয়েছিল যে আমি এই দলের চেয়ারম্যান হব। সাকিবকে আশ্বস্ত করার জন্যই আমার কাছে নিয়ে আসে।

ডেইলি স্টার: সাকিবের সঙ্গে আপনার কী কথা হয়েছিল?

হাফিজ উদ্দিন: পরে আর কোনোদিন দেখা হয়নি। ওইদিন আমি তাকে বলেছি যে, তুমি তো একটা স্পোর্টসম্যান। যারা খেলাধুলা করে, তাদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত না। অবসর নেওয়ার পর যেতে পারে। অনেক দেশেই এটা হয়। পাকিস্তানে ইমরান খান করেছে। সে চুপ করে শুনে গেছে। আমি তাকে বলেছি, অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যেও। সেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আগ্রহী ছিল। তাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে, সে এখান (বিএনএম) থেকে নির্বাচনে অংশ নেবে না, আওয়ামী লীগ থেকেই করবে।

ডেইলি স্টার: সোশ্যাল মিডিয়ায় 'ভারত বয়কট বা ভারতীয় পণ্য বয়কট' প্রচারণা চলছে। বিএনপির একজন নেতাও এটা নিয়ে কথা বলেছেন। এই বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?

হাফিজ উদ্দিন: এটা আপনারা যতটুকু জানেন, আমিও ততটুকুই জানি। দলের মধ্যে এটা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, সেটাও আপনারা জানেন। তাই এখন এটা নিয়ে মন্তব্য করার সময় নয়।

ডেইলি স্টার: ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী। সেরকম জায়গায় বর্জন-বয়কটের যে বিষয়টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে, এটা নিয়ে আপনার অবস্থান কী?

হাফিজ উদ্দিন: এই ব্যাপারে দলের যে অবস্থান, আমার অবস্থানও তাই। এখানে ব্যক্তি আমার কোনো বক্তব্য বা অবস্থান নেই।

ডেইলি স্টার: তার মানে এই বিষয়ে দলের বক্তব্যই আপনার বক্তব্য?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ, এই বিষয়ে দলের বক্তব্যই আমার বক্তব্য।

ডেইলি স্টার: এত বছর ধরে বিএনপি করছেন। বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ নিল না। এটা করে ঠিক করল নাকি ভুল—এই কেন্দ্রিক একটা আলোচনা আছে। বিএনপির সামনের সময়টাকে কীভাবে দেখছেন? বিএনপি কীভাবে টিকে থাকবে?

হাফিজ উদ্দিন: আমি তো সংবাদ সম্মেলনে বলেছি, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির যাওয়া উচিত ছিল। জাতিসংঘ বা প্র্যাক্টিক্যালি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নির্বাচনে গেলে বিএনপি এখন ক্ষমতায় থাকত। তারা নির্বাচনটা ফেয়ার করে দিত। এই উদ্যোগই তো নেওয়া হয় নাই। উদ্যোগটা নেওয়া উচিত ছিল। সেটা আমি প্রকাশ্যেই বলেছি। আমাদের দেশে এটাও তো দোষ। দল ভুল করতে পারে, সেটা বলা যাবে না প্রকাশ্যে। এটা সব দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

ডেইলি স্টার: নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ ছিল বিএনপির?

হাফিজ উদ্দিন: নিশ্চয়ই সুযোগ ছিল। এতবার বিদেশিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, এটা আলাপ করতে পারে নাই?

ডেইলি স্টার: তার মানে বিদেশিদের সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে এই বিষয়ে আলাপের সুযোগ ছিল বলে আপনি মনে করছেন?

হাফিজ উদ্দিন: নিশ্চয়ই, এতকিছু নিয়ে আলাপ হয়। বিএনপির লক্ষ্য হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনার সরকার চলে যেতে হবে। একই কথাই তো বারবার বলছে তারা। এটা তো কঠিন। আর বিদেশিরাই বা এই পর্যায় পর্যন্ত যাবে কেন, যায় না তো। সুতরাং অল্টারনেটিভ হিসেবে এই চেষ্টাটা তাদের করা উচিত ছিল। বিএনপির যেহেতু জনসমর্থন আছে, নির্বাচনে গেলেই তো বিএনপির বিজয় অবশ্যম্ভাবী। সেদিকে চেষ্টা করাটা দরকার ছিল।

ডেইলি স্টার: বিএনপির জনসমর্থন আছে—এই যে এই কথাটা বিএনপির নেতারা বলেন, এটা কীসের ওপর ভিত্তি করে বলেন?

হাফিজ উদ্দিন: ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পাঁচটা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল। পাঁচটাতেই বিএনপি জিতেছিল। তারপরে যে ট্রেন্ড শুরু হয়, সব নির্বাচনে বিএনপিই জেতে। এরপর উপজেলা নির্বাচনে ৯০ শতাংশ জায়গায় বিএনপি জেতা শুরু করল, তারপর তারা (আওয়ামী লীগ) কারচুপি শুরু করে দিল। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। বর্তমান শাসক দল বুঝে গেছে যে নির্বাচন দিলেই বিএনপি জিতবে। তারপর বিভাগীয় সমাবেশের সময় রাস্তা-ঘাটে মানুষের কথা-বার্তা, ফেসবুক ও মিডিয়া—যেখানেই দেখেন সব জায়গাতেই দেখা যায় বিএনপির পক্ষের লোকজন বেশি। সেজন্যই মনে হয় বিএনপির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এটা তো বোঝাই যায়। আপনি রাস্তা-ঘাটে দেখলেই বুঝবেন।

ডেইলি স্টার: এর কারণ কি এই যে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বলে বিএনপি জনপ্রিয়?

হাফিজ উদ্দিন: এটা প্রধান কারণ। তাদের দুঃশাসনের কারণেই বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

ডেইলি স্টার: কিন্তু বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না—এমন সমালোচনাও তো আছে?

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপি চেষ্টা করছে। এরচেয়ে বেশি বিএনপির পক্ষে করা সম্ভব না। আমাদের ২২ জন লোক আন্দোলনে জীবন দিয়েছে। এরচেয়ে বেশি আর কী করবে? জেলখানায় ১৬ জনকে কেউ বলে হত্যা করা হয়েছে, কেউ বলে এমনি মারা গেছে। এগুলো তো স্যাক্রিফাইস। সব মিথ্যা মামলায় জেলে গেছে। আমিও যে ছয়দিন জেল খাটলাম, সেটা তো মিথ্যা মামলায়। আমি নাকি গাড়ি পুড়িয়েছি। 

ডেইলি স্টার: আপনাকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল যে আপনি গাড়ি পুড়িয়েছেন কি না?

হাফিজ উদ্দিন: না, আমাকে রিমান্ডে নেয়নি। আমি যেই সময় চিকিৎসার জন্য ভারতে ছিলাম, তখন এই মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। এই মামলার বাদী পুলিশ, সাক্ষী পুলিশ, সবই পুলিশ। কারো নাম তারা জানে না। আমার আইনজীবী বলছেন, শেষদিন তারা একজন পুলিশকে শিখিয়ে নিয়ে এসেছে কয়েকজনের নাম, আমার ও আলতাফ চৌধুরীসহ আরও কয়েকজনের নাম। তারা দেখলে চিনতেও পারবে না কাউকে। তাদের দিয়ে বলিয়েছে।

রায় দেওয়ার পর আমার আইনজীবী জানালেন যে, আমাকে ২১ মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমি নাকি জনতা ব্যাংকের গাড়ি পুড়িয়েছি। ৩৪ বছর আগে আমি এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। অনেক লুটেরাকে ঠেকিয়েছিলাম। একদিন প্রেসিডেন্ট এরশাদ আমাকে ফোন করে বললেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজান চৌধুরীকে ঋণ দেওয়ার জন্য। বললেন, মিজান চৌধুরী রাজনীতি করেছেন এতদিন, কিন্তু তার কিছু নাই। তোমার কাছে যাবে, লোন দিও। আমি তাকে বলেছি, ঠিক আছে স্যার। কিন্তু এমডিকে বলেছিলাম তাকে ঋণ না দিতে। এসব বিষয় মিটিংয়েই উঠাবেন না।

ডেইলি স্টার: এরশাদ তো তখন ক্ষমতায় ছিলেন। সেই সময় তার কথা না শুনলে পরবর্তীতে বিপদ হতো না?

হাফিজ উদ্দিন: এরকম পরিস্থিতি ছিল না তখন। আমাকে পরে আর কখনো কিছু বলেনি।

এক সাংবাদিক ছাপাখানার জন্য মেশিন কিনবে বলে সাদা কাগজের ওপর সবুজ কালি দিয়ে এরশাদকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়ে এসেছেন যে, তাকে এক কোটি টাকা প্রদান করা হোক। এটা দেখে এমডি কাঁপতেছে যে, প্রেসিডেন্টের লেখা। পরে আমার কাছে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আরে বাদ দেন এসব। ব্যাংকের নিয়ম অনুসরণ করেন। অন্যথায় আপনারাও জেলে যাবেন, আমিও যাবে। এটা করবেন না। এভাবে আমি ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা করেছি। আর সেই ব্যাংকের গাড়ি পোড়ানোর মামলা আমার বিরুদ্ধে।

ডেইলি স্টার: এই যে প্রেসিডেন্ট বলার পরেও ঋণ দিলেন না। পরে প্রেসিডেন্ট কিছু মনে করলেন না যে, তার কথা শুনলেন না?

হাফিজ উদ্দিন: এরপর তো আর তিনি এগুলোর খোঁজ নেননি। আর ওই লোকও কয়বার প্রেসিডেন্টকে ধরবে। আসলে নিজে চুরি না করলে এসব করা যায়। নিজের দুর্বলতা থাকলে করা যায় না।

ডেইলি স্টার: তার মানে ওই সময় পর্যন্ত এরকম ব্যাপার ছিল যে নিজে সৎ থাকলে কাজ করার সুযোগ ছিল?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওষুধ নীতি করেছিলেন। আমি ভারতে গিয়ে তিন মাস ছিলাম। তাদের ওষুধের চেয়ে অনেক বেটার আমাদের ওষুধ। বাঙালি সস্তায় ওষুধ খাচ্ছে, এর পেছনে অবদান তো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। অথচ চিকিৎসকদের সংগঠন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করে দিয়েছিল।

ডেইলি স্টার: বিএনপির ভবিষ্যৎ কী?

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপির ভবিষ্যৎ খুব ভালো। এই যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, এটা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। হয়ত সময় লাগবে। তবে বিএনপি জনগণের রায় পাবে একদিন। 

ডেইলি স্টার: মাঝখানে আপনাকে কিছুটা চুপচাপ মনে হয়েছিল। আবার গত কয়েকদিন আপনাকে বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে…

হাফিজ উদ্দিন: দায়িত্ব দিয়েছে, তাই কাজ করছি কথা বলছি।। বলেছে আপনি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক। এটা তো বিরাট দায়িত্ব না। তবে দায়িত্ব দেওয়ার ফলে এখন মিটিংয়ে যাচ্ছি, কথা বলছি। আবার কাল-পরশু থেকে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। আমারও এখন সেই স্ট্যামিনা নেই এগুলো করার। অনেকদিন চুপচাপ ছিলাম, তাই এখন কথা বলছি।

‘লাল কালিতে লিখে দিতে হবে, বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানির জন্য নয়’

এর একদিক মিয়ানমারেও গ্যাস পাওয়া গেছে এবং অপরদিক ভারতেও গ্যাস পাওয়া গেছে। মাঝখানে আমাদের অংশটা এতদিন বসিয়ে রাখা হলো। আমার কাছে সবসময় এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। গ্যাসের ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এত বড় একটা সমুদ্র থাকার পরও অকর্ম হয়ে বসে থাকা।
তেল গ্যাস অনুসন্ধান

বিশেষজ্ঞদের নিষেধ সত্ত্বেও এলএনজি আমদানির পেছনে কাড়িকাড়ি ডলার খরচ করার পর এখন নিজেদের সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে 'জোর' দিচ্ছে সরকার। এর জন্য শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া।

দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সার্বিক প্রক্রিয়া, মজুত, গ্যাস রপ্তানির সুযোগ দেওয়াসহ নানা বিষয়ে জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমামের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনি সবসময় বলে এসেছেন যে আমাদের স্থল ও সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়া দরকার। বছর দশেক পর মনে হচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম: আমার কাছে মনে হয়, আমরা অনেক দেরি করে ফেললাম। কারণ, বিগত ১০ বছরের অবস্থা যদি দেখেন, ২০১২ সালের পর সমুদ্রে তেমন কোনো অ্যাক্টিভিটি হয়নি। আমাদের এত বড় এবং খুবই উপযোগী সমুদ্র আছে। এটি খুবই সম্ভাবনাময় স্থান।

এর একদিক মিয়ানমারেও গ্যাস পাওয়া গেছে এবং অপরদিক ভারতেও গ্যাস পাওয়া গেছে। মাঝখানে আমাদের অংশটা এতদিন বসিয়ে রাখা হলো। আমার কাছে সবসময় এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। গ্যাসের ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এত বড় একটা সমুদ্র থাকার পরও অকর্ম হয়ে বসে থাকা।

এখন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কখনোই না করার চেয়ে দেরি করে হলেও যে শুরু হয়েছে, সেটা নিয়েই এখন সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এখন যেহেতু শুরু হয়েছে, বেশ জোরেশোরেই কাজ এগিয়ে নেওয়া উচিত।

আমরা যদি এই তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজটা আর পাঁচ বছর আগেও শুরু করতাম, তাহলে এখন গ্যাসের সরবরাহ পেতাম। এখন শুরু হলো, সহসা তো আর গ্যাস পাব না। সাগরের গ্যাস পেতে বেশ সময় লাগবে।

ডেইলি স্টার: দরপত্র দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গ্যাস পেতে কতদিন লাগতে পারে?

অধ্যাপক বদরূল: গ্যাস আসতে অন্তত পাঁচ বছর লাগবে। এখন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দরপত্র আহ্বানে ছয় মাস, এর রেসপন্স পেতে ছয় মাস, বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ছয় মাস—এভাবে দেড় বছর চলে যাবে। যে প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি, সবকিছু রেডি করতে আরও এক বছর চলে যাবে। এরপর তারা প্রকৃত অর্থে সাগরে নামতে পারবে।

জরিপ ও অনুসন্ধান করে খনন প্রক্রিয়া শেষ করতে নূন্যতম আরও দুই বছর লাগবে। এই সব ধাপ শেষ করার পরে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি আসবে। গ্যাস পাওয়ার পরেও আবার পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস আনতে হবে। সেটার জন্যও আবার একটা সময়ের ব্যাপার আছে।

এ কারণেই আমি বারবার বলেছি, ১০টা বছর আমরা বসে থাকলাম। ২০১২ সালে আমাদের সমুদ্র সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতে এ নিয়ে কাজ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালে। ১০টা বছর বসে থাকার খেসারত তো আমাদের দিতেই হবে।

ডেইলি স্টার: এভাবে বসে থাকার কি কোনো কারণ ছিল?

অধ্যাপক বদরূল: কোনো কারণ নেই। এটা অযৌক্তিক এবং অদূরদর্শিতা ও অকর্মণ্যতার সাক্ষ্য।

আমরা সবসময় বলে এসেছি যে এলএনজি কিনতে যাওয়া ভুল সিদ্ধান্ত। এখন দেখেন, সরকার নিজেই স্বীকার করছে যে আর পারছি না আমদানি করে, ডলার তো শেষ। এখন তারা নিজের গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে।

ডেইলি স্টার: সমুদ্রে মিয়ানমার ও ভারত বড় পরিমাণে গ্যাস পেয়েছে। যদি ধরে নেই আমরাও তেমন পরিমান গ্যাস পাব। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে যায়, তাদের লক্ষ্য থাকে যত দ্রুত সম্ভব তেল-গ্যাস তুলে সেগুলো বিক্রি করে লাভ নিয়ে চলে যাওয়া। প্রয়োজনে তারা অন্য দেশে এগুলো বিক্রি করে। সেক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভজনক হবে?

অধ্যাপক বদরূল: বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানির জন্য নয়—এই কথাটা লাল কালিতে সব নথিতে বড় করে লেখা থাকতে হবে। যাতে কোনো অবস্থাতেই এই গ্যাস রপ্তানির সুযোগ না থাকে।

দরপত্র যেটা আহ্বান করা হয়েছে, সেখানে অবশ্য বলা আছে যে এই গ্যাস যদি দেশে ব্যবহার করা না হয় বা বাংলাদেশ যদি এই গ্যাস না কেনে, তাহলে সেটা রপ্তানি করা যাবে। এই কথাটা না লেখাটাই ভালো। কিন্তু, তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে আবার একটা চাপ থাকে। কারণ, তারা যখন কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে যাবে, তখন ব্যাংক চাইবে তাদের কর্মপরিকল্পনায় রপ্তানির সুযোগ থাক।

কিন্তু, গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ, আমাদের তো আর কিছু নেই। বাংলাদেশের যতটুকু প্রয়োজন এবং যতদিন প্রয়োজন, এটা ব্যবহার করতে হবে। জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং যোগান কমছে। কাজেই যোগান বাড়িয়ে চাহিদার সমান কখনোই করতে পারবে না। দেশের গ্যাস উৎপাদন হলেও কিছু এলএনজি আমদানি করতেই হবে।

ডেইলি স্টার: আমাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেই পরিমাণ গ্যাস আমাদের নিশ্চয়ই একবারে লাগবে না। অনেক বছর ধরে সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু, উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চয়ই চাইবে যতদ্রুত সম্ভব এগুলো উত্তোলন শেষ করে তাদের মুনাফা বাড়াতে।

অধ্যাপক বদরূল: আমাদের উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। একবারেই সব তুলে ফেলতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। যে গ্যাস আমি এক বছরে তুলতে পারতাম, সেটা প্রয়োজনের হিসাবে ১০ বছরে তুলব।

ডেইলি স্টার: বিদেশি প্রতিষ্ঠান সেই শর্তে রাজি হবে কেন?

অধ্যাপক বদরূল: এটা একটা যৌক্তিক প্রশ্ন। কিন্তু, এখানে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয় আছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে যদি এই স্বাধীনতা দেওয়া হয় যে তোমরা যত খুশি উঠাও এবং বিক্রি করো, সেটা একটি ব্যাপার। আর দেশের স্বার্থে তাদের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে যে দেশের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস তুলতে হবে। এখান থেকে ব্যবসা তারাই করবে, কিন্তু একটু ধীরগতিতে। এমন চুক্তি পৃথিবীর অনেক দেশেই হয় এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এই চুক্তির যৌক্তিকতা জানে। তাদেরকে রাজি করানো যাবে কি না, সেটা আমাদের নেগোসিয়েশনের দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে।

দেরিতে হলেও গ্যাস উত্তোলনের দিকে মনোনিবেশ করা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই গ্যাস তুলে শেষ করে ফেলা বাংলাদেশের জন্য ঠিক হবে না। দেশের চাহিদা বুঝে সেই পরিমাণে উত্তোলন করতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই এই গ্যাস রপ্তানি করা যাবে না।

ডেইলি স্টার: বিদেশি কোম্পানীর থেকে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ডলারে গ্যাস কিনবে বাংলাদেশ?

অধ্যাপক বদরূল: হ্যাঁ। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের যে দাম সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাসের দাম নির্ধারিত হবে। যেমন: এখন ক্রুড ওয়েলের দাম ৮০ ডলার। সেই হিসাবে গ্যাসের ইউনিটের দাম হবে আট ডলার। ক্রুড ওয়েলের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে গ্যাসের দাম ওঠা-নামা করবে।

ডেইলি স্টার: আমাদের সমুদ্রসীমার কোন ব্লকে কী পরিমাণ গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে, এমন কোনো জরিপ কি বাংলাদেশের কাছে আছে?

অধ্যাপক বদরূল: সাধারণভাবে বাংলাদেশে কয়েকটি জরিপ হয়েছে। সেখানে সুনির্দিষ্ট পরিমাণের তথ্য নেই। তবে, সার্বিকভাবে বলা হয় যে পূর্ব দিকের ব্লকগুলোতে গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকার সম্ভাবনা আছে এবং পশ্চিম দিকের ব্লকগুলোতে কম। এ জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোরও পূর্ব দিকের ব্লকগুলোর প্রতি আগ্রহ বেশি।

পূর্ব দিকের ব্লকগুলো মিয়ানমারের ব্লক সংলগ্ন। মিয়ানমার যেহেতু অনেক গ্যাস পেয়েছে, তাই ধারণা করা হচ্ছে যে একই ধরনের ফলাফল আমাদের ব্লকেও পাওয়া যাবে।

ডেইলি স্টার: আমাদের কি এমন কোনো সুযোগ আছে যে আমাদের যা ব্লক আছে তার মধ্যে কিছু থেকে গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ দিলাম, আর বাকিগুলোতে দিলাম না। নাকি সবগুলোই এক সঙ্গে দিয়ে দিতে হবে?

অধ্যাপক বদরূল: হ্যাঁ, কিছু ব্লকে অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আছে। একবারেই যে সব ব্লক থেকে তেল-গ্যাস তুলে ফেলতে হবে, তা তো না। এটা নির্ভর করে সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে।

যারা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আমাদেরকে রাস্তার মানুষ মনে করে, আমাদের কথার কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। অথচ, দিন শেষে আমরা যেটা বলি সেটাই ঠিক হয়। ২০১৮ সালে সরকার যখন এলএনজি আমদানি শুরু করতে যায়, তখনই বলেছিলাম যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত। তখন তৌফিক এলাহীরা আমাদের কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

ডেইলি স্টার: সরকার বারবার বলেছে, রপ্তানির সুযোগ না দিলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী হয় না।

অধ্যাপক বদরূল: রপ্তানির সুযোগ না দিলে তারা আসবে কি না, সেটা নির্ভর করছে নেগোসিয়েশনের ওপর। আমাদের দেশের প্রচুর গ্যাস প্রয়োজন—এটা সরকার কেন বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বোঝাতে পারবে না? তারা যত গ্যাসই তুলুক, তাতে আমাদের পুরো চাহিদা মিটবে না। আমাদের তো নিজস্ব আর কোনো জ্বালানি নেই। আমাদের সবকিছুই গ্যাস দিয়ে চলে। কাজেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তো এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই যে আমরা তাদের উত্তোলন করা গ্যাস কিনব না এবং তাদের আয় করার জন্য এগুলো রপ্তানি করতে হবে।

ডেইলি স্টার: মিয়ানমার ও ভারতের ব্লকগুলোতে কি শুধু গ্যাস পেয়েছে, নাকি সেখানে তেলও আছে?

অধ্যাপক বদরূল: মিয়ানমার মূলত গ্যাস পেয়েছে, ভারতেও তাই। এই অঞ্চলটাতে তেলের চেয়ে গ্যাসের পরিমাণ বেশি। তেল কিছু আছে, কিন্তু সেটা খুবই কম।

ডেইলি স্টার: বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের ব্লকগুলোতে জরিপ করেছে। জরিপে কী পাওয়া গেছে, তা কি আমরা জানি?

অধ্যাপক বদরূল: একটি প্রতিষ্ঠান আছে টিজিএস—তারা জরিপ করে। মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে তারা এই জরিপ করেছে এবং বাংলাদেশ তাদের দিয়ে করিয়েছে। এই জরিপ প্রতিবেদন তারা এখন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবে, যাতে তারা কম সময়ে গ্যাস অনুসন্ধানে যেতে পারে।

এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হবে।

ডেইলি স্টার: তার মানে, ব্লকগুলো কী পরিমাণ তেল-গ্যাস আছে, তা বাংলাদেশও এখনো সঠিকভাবে জানে না।

অধ্যাপক বদরূল: না, জানে না। ওই রকম জরিপ এখনো হয়নি। টিজিএস যে জরিপ করেছে সেটাও প্রাথমিক। খনন না করা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে কতটা গ্যাস আছে।

প্রাথমিক জরিপে সম্ভাবনার একটি বিষয় পাওয়া গেছে। এখন খনন করে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে হবে।

ডেইলি স্টার: স্থলভাগের গ্যাসের ওপরও আপনি একই রকম জোর দিয়েছেন। সম্প্রতি সুন্দলপুরের ৩ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া গেল। এখন যে গতিতে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান চলছে সেটা কি ঠিক আছে? গ্যাস অনুসন্ধানে সরকার কী পুরোপুরি জোর দিতে পারছে?

অধ্যাপক বদরূল: জোর দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বহুদিন ধরে বলছি, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল খুবই সম্ভাবনাময় এলাকা। কিন্তু, সেদিকে তেমন কিছু হচ্ছে না।

একদিক থেকে বলা যায় যে কিছুটা জোর দেওয়া হয়েছে—তিন বছরের মধ্যে কূপ খনন করার একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতগুলো কূপ খননের পরিকল্পনা আগে করা হয়নি। খুব বড় আকারে এখন সেটা নেওয়া হচ্ছে।

এখন দেখতে হবে যে পরিকল্পনাগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় কি না। কারণ, এর আগেও ২০১৫-১৬ সালের দিকে ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু, কয়েকটা খননের পর পরিকল্পনা হাওয়া হয়ে যায়।

এখন বলা হচ্ছে, দুবছরের মধ্যে ৪৬টা কূপ খনন করা হবে। এগুলোর সবই খনন করা হয়, নাকি হাওয়া হয়ে যায়—সেটাই দেখার বিষয়। আমরা আর শুধু কথায় সন্তুষ্ট হতে চাই না।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) অনেক কম টাকা খরচ করে এবং কম কূপ খনন করে গ্যাস পায়। তারপরও কূপ খননের সময় গ্যাজপ্রম বা অন্যদের কূপ খনন করতে দেওয়া হয়। এই জায়গায় কি আমাদের কোনো পরিবর্তন এসেছে, নাকি একই জায়গায় রয়ে গেছি?

অধ্যাপক বদরূল: আমাদের এই নীতিতে পরিবর্তন হয়নি। বাপেক্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। বাপেক্সকে বাড়ির কাজের ছেলে বানিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে, আসল কাজ করে বাইরের লোকজন।

বাপেক্সের যে সম্ভাবনা সেটা খুব শক্ত হাতে ধরতে হবে। তারা কিন্তু অনেক কিছু করতে পারে।

ডেইলি স্টার: বাপেক্সের কি সেই সক্ষমতা আছে?

অধ্যাপক বদরূল: আছে, অবশ্যই আছে। বাপেক্স ইতোমধ্যে অনেকগুলো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। তাহলে কোথায় তাদের সক্ষমতার অভাব? বাপেক্সে যারা কাজ করে, তারা তো আমাদের হাতে তৈরি। এই ছেলেমেয়েরাই যখন আবার অন্য কোনো নামীদামী তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে তখন তাদেরকে সুপার এক্সপার্ট ধরা হয়। কিন্তু, এরাই বাপেক্সে কাজ করার সময় দাম পায় না।

বাপেক্সের কর্মদক্ষতা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলে, আমি সেখানে বাধ সাধব। হ্যাঁ, এটা হতে পারে যে তাদের অর্থায়ন, লজিস্টিকে দুর্বলতা আছে। কিন্তু, সেগুলো কাটিয়ে ওঠা কেবলমাত্র সদিচ্ছার ব্যাপার। সরকার যদি মনে করে যে আমরা বড় একটা ড্রাইভ দিয়ে বাপেক্সকে এসব দিকেও শক্তিশালী করব, তাহলে সেটা সম্ভব।

ডেইলি স্টার: সেখানে তো অর্থের জোগানের প্রশ্ন আসবে।

অধ্যাপক বদরূল: আমরা তো কোথাও টাকার অভাব দেখি না। চারদিকে তো টাকার ছড়াছড়ি। শুধু দেশীয় বাপেক্সকে শক্তিশালী করার প্রসঙ্গ আসলেই টাকার প্রশ্ন আসবে কেন? এলএনজি কেনার সময় তো টাকার অভাব হয় না।

আমরা সবসময় বলে এসেছি যে এলএনজি কিনতে যাওয়া ভুল সিদ্ধান্ত। এখন দেখেন, সরকার নিজেই স্বীকার করছে যে আর পারছি না আমদানি করে, ডলার তো শেষ। এখন তারা নিজের গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে।

যারা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আমাদেরকে রাস্তার মানুষ মনে করে, আমাদের কথার কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। অথচ, দিন শেষে আমরা যেটা বলি সেটাই ঠিক হয়। ২০১৮ সালে সরকার যখন এলএনজি আমদানি শুরু করতে যায়, তখনই বলেছিলাম যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত। তখন তৌফিক এলাহীরা আমাদের কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

সাক্ষাৎকার
255 Shares
facebook sharing button Share
twitter sharing button Tweet
whatsapp sharing button Share
sharethis sharing button Share

‘অসাধারণ পারফর্মার বললে আমি বর্ষণের নাম নিব’

প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে প্রকাশ করেছেন নিজেদের হতাশা। তবে আগামী দিনে এই দলের কয়েকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াতে পারেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 
Rohanat Doullah Borson
উইকেট পেয়ে বর্ষণের উল্লাস

যুব এশিয়া কাপ জিতে প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু যুবারা বিদায় নিয়েছে সুপার সিক্স পর্ব থেকেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৫ রানে হৃদয়ভাঙা হারে হাতছাড়া হয়েছে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে প্রকাশ করেছেন নিজেদের হতাশা। তবে আগামী দিনে এই দলের কয়েকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াতে পারেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার ধরনটা নিশ্চয়ই খুব যন্ত্রণাদায়ক ছিলো?

স্টুয়ার্ট ল: আমরা শুধু ম্যাচ নয় পাকিস্তানের থেকে রানরেট বেশি রেখে জেতার কথা আলাপ করছিলাম, সেই পথেও ছিলাম। আমরা টস জিতে পাকিস্তানকে দুইশোর ভেতর আটকে রেখেছিলাম। বোলিং দারুণ ছিলো। দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে বর্ষণ (রোহানাত দৌলা) ও জীবন (শেখ পারভেজ)। আমাদের ফিল্ডিংও খুব ভালো হয়েছে। আমরা দারুণ কিছু ক্যাচ নিয়েছি, রান আউট করেছি। আমরা সত্যিই লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলাম। তারপর এলো ব্যাটিং। আমরা জানতাম রানটা ৩৮.১ ওভারে নিতে হবে, ওভারপ্রতি চার রান করেছিলো। চাপটা আমাদের বেশি হয়ে গেল, পাকিস্তান খুব ভালো বল করল। ব্লুমফন্টেইন থেকে উইকেট ভিন্ন ছিলো, ব্যাটার বান্ধব ছিলো না। আমরা মনে করেছি ম্যাচটা জিততে হবে, সেমিফাইনালে যেতে হবে। অবশ্যই হৃদয়ভাঙা ছিলো।

ড্রেসিংরুমে অনেক কান্নাকাটি হয়েছে, ছেলেরা খুব আপসেট হয়ে যায়। নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ে। আমরা সবাই সামনে এগিয়ে যেতে উদগ্রীব ছিলাম, কিন্তু সফরটা  সংক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।

কোচ হিসেবে কতটা কষ্ট পেয়েছেন? 

স্টুয়ার্ড ল: কোচ হিসেবে আমি কষ্ট পাইনি। কিন্তু ছেলেরা কষ্ট পাচ্ছে সেজন্য কষ্ট পেয়েছি। আমি নিজের জন্য এখানে আসিনি, খেলোয়াড়দের জন্য এসেছি। ২০ মাস থেকে এই ভ্রমণে সঙ্গী ছিলাম। সম্ভবত আমি মাত্র একটা অনুশীলন ম্যাচ মিস করেছি এই সময়ে। এই ছেলেদের তরুণ খেলোয়াড় শুধু না মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতেও দেখেছি। আমি কেবল এশিয়া কাপ জেতার স্মৃতিটা মনে করছি। আমরা এখনো এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন, আগামী দুই বছর তা থাকব। এটাই ইতিবাচক।

ব্যাটিংটাই কি ভুগালো?

স্টুয়ার্ড ল: সব সময়ই ভেবেছি উন্নতির জায়গা আছে। আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ছেলেদের নিয়ে কথা বলছি। তরুণ হিসেবে প্রতিদিন তার ভুল করবে, সেখান থেকে শিখবে। এটা তাদের ক্যারিয়ারের উন্নতির পর্যায়। চাপের সময়গুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে তাদের কাজে দেবে। সবাই জিততে চায়, কিন্তু মনে রাখতে হবে বয়সভিত্তিক ধাপে জেতাটাই মুখ্য নয়।

এই দলের কারা খুব দ্রুত জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে?

স্টুয়ার্ড ল:  বোলিংয়ের দিক থেকে অনেকে আছে। আমি বর্ষণের কথা বলব। এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ও ফাইনালে আমিরাতের বিপক্ষে সে দুর্দান্ত ছিলো। আমাদের মারুফ মৃধার মতন ব্যাকআপ আছে, ইমন ভালো (ইকবাল হোসেন)। তবে অসাধারণ পারফর্মার বললে আমি বর্ষণের নাম নিব। এছাড়া জীবন স্পিনার হিসেবে খুব ভালো। আরিফুল (ইসলাম) আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও নেপালের বিপক্ষে দ্রুত রান তোলে রানরেট বাড়িয়েছে। যখন চাপ থাকবে আরিফুলকে শিখতে হবে কীভাবে স্ট্রাইক রোটেট করা যায়। আশিকুর রহমান শিবলি এশিয়া কাপে ভালো করেছে, তার দিকে নজর থাকবে।

ঘরোয়া পর্যায়ে এই ছেলেদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?

স্টুয়ার্ড ল:  আমার বার্তা থাকবে যাও এবং কোচদের কথা শোন। প্রত্যেক কোচেরই ভিন্ন দর্শন আছে। কোচ ও দল কি চায় সেটা বোঝার চেষ্টা কর। প্রক্রিয়া কখনো বদল হবে না। ব্যাটিংয়ে রক্ষণ আঁটসাঁট করা, ফুটওয়ার্ক ভালো করলে স্ট্রাইক রোটেটের হার বাড়বে।

এখান থেকে আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা কি?

স্টুয়ার্ড ল: আমি এখনো বিসিবির সঙ্গে কথা বলিনি চালিয়ে যাওয়া নিয়ে। আমার জন্য পাইপলাইনে আরও কিছু সুযোগ আছে। আমি বাংলাদেশে থাকতে পছন্দ করব, কাজটা চালিয়ে যেতে পছন্দ করব। বাংলাদেশে আমার সময়টা ভালো কেটেছে। কাজ করার জন্য এটা দারুণ জায়গা। আলোচনা যেহেতু হয়নি, জানি না কি হবে।

The Daily Star  | English

Interim govt wants ICT trial of killings during student protests: Asif Nazrul

The government is also trying to ensure that ICT investigators work under the supervision of United Nations, he says

12m ago