শনিবার ১৩ জুলাই ২০২৪
facebook sharing button
twitter sharing button
linkedin sharing button
blogger sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button
কুলি থেকে আবেদ আলীর কোটিপতি হওয়ার গল্প
মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪, ১১:১৪ AM
গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। তিনি সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক ছিলেন।কুলির কাজ করে শুরু করা সাধারণ এই লোকটি হঠাৎ করে কোটিপতি বনে গেছেন। 

গাড়িচালক আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন চলে যান ঢাকায়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ঘটে জীবনের বাঁক বদল। পিএসসি থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠার পর ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে আবেদ আলীর নাম। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

অথচ শৈশবে সেই আবেদ আলীর জীবনযুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ভিন্নভাবে। অল্প বয়সেই ঢাকায় পা রেখে কাজের সন্ধানে নামতে হয় তাকে। কুলির কাজ করে শুরু করেন আয়-রোজগায়। এরপর রিকশা চালানো, হোটেলে ধোয়ামোছার কাজ, চাল বিক্রিসহ যখন যে কাজ পেয়েছেন তা-ই করেছেন। একপর্যায়ে গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। সেখান থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নেন তিনি। অনৈতিক উপায়ে কুলি থেকে বনে যান কোটিপতি। গড়েন বিপুল অর্থ-সম্পদের পাহাড়।

আবেদ আলী এখন ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন। এলাকায় টানিয়েছেন পোস্টার-ব্যানার। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন তিন তলা বাড়ি, একটি পাকা মসজিদ ও বাগান। কিনেছেন বহু ফসলি জমি।

আবেদ আলী একা নন, প্রশ্নফাঁসে জড়িত হিসেবে নাম এসেছে তার বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামেরও। এ অভিযোগে তাকেও গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারের পর সিয়ামকে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এখনো ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলায় বাবাকে হারান আবেদ আলী। এরপর তিন ভাই ও এক বোনকে নিয়ে তাদের মা অনেক কষ্টে সংসার চালান। অন্যের জমিতে ধান কুড়িয়ে ও সেগুলো বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাতো তার মা। এমনকি কোরবানির ঈদের সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করে তা আবার বিক্রি করতো, সেই টাকায় খাবার কিনতে হতো আবেদ আলীর।

অভাব-অনটনের সংসারে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে জীবিকার খোঁজে ঘর ছাড়েন আবেদ আলী। ঢাকায় গিয়ে নেন কুলির কাজ। রাতের পর রাত ফুটপাতে, খোলা আকাশের নিচে কিংবা রেলস্টেশনে ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। এভাবেই কেটেছে তার শৈশব-কৈশোর। একসময় গাড়ি চালানো শিখে পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি নেন।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবেদ আলীর বড় ভাই জবেদ আলী একজন কৃষক। তিনি বাড়িতে থেকে কৃষিকাজ করেন। বছরখানেক আগে এক ছেলেকে ইতালি পাঠিয়েছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজো। ছোট ভাই সাবেদ আলীও দীর্ঘদিন ছিলেন সৌদি আরবে। সম্প্রতি দেশে ফিরে ধারদেনা করে ছেলেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য পাঠান। কিন্তু পাঁচ মাস পার হলেও এখনো তার ছেলে ইতালি যেতে পারেননি, আছেন লিবিয়াতেই। ডাসারের পৈত্রিক ভিটায় এক তলার বিল্ডিংয়ে বর্তমানে আবেদ আলীর দুই ভাই থাকেন। সবার বড় বোন মহরজানের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন।

আবেদ আলী পৈতৃক ভিটা থেকে বেশ খানিকটা দূরে জমি কিনে তিনতলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এক বাড়ি বানিয়েছেন। বর্তমানে ওই বাড়িটি রং করার কাজ চলছে। বাড়ির পাশেই নির্মাণ করেছেন মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ। তার পাশেই গড়ে তুলেছেন ছোট্ট একটি বাগান। এছাড়া নিজ নামে, স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়িসহ বিভিন্ন নামে বহু জমি কিনেছেন আবেদ আলী। বড় ছেলে সিয়ামকে পড়িয়েছেন ভারতে। বর্তমানে দেশের একটি প্রথমসারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।

আবেদ আলীর ছোট ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করে। ঢাকায় তাদের বাড়ি এবং দামি গাড়িও আছে। পরিবার নিয়ে আবেদ আলী এখন ঢাকাতেই থাকেন। মাসে দু-একবার যান গ্রামের বাড়িতে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন অনেকদিন ধরে। গ্রামে গেলেই গরিব মানুষদের নানা ধরনের সহযোগিতা করেন। এ বছর কোরবানির ঈদে তিনি গরিবদের মাঝে অনেক মাংস বিতরণ করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডে গ্রামের মানুষও তাকে বেশ পছন্দ করেন। এ কারণে তার প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকা বা অনৈতিক উপায়ে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে যাওয়ার খবর কিছুতেই মানতে পারছেন না এলাকার মানুষেরা।

জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলী এলাকায় রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করেন। পরে সে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ডাসার উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামেও তার জমি আছে। কিছুদিন আগেও এলাকার মানুষ তাকে তেমন চিনতেন না। কিন্তু কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে এলাকায় গিয়ে ১০০ জনের মাঝে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করে এলাকায় সাড়া ফেলেন। মাংস বিতরণের সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুক পেজে।

আবেদ আলীর ছেলে সিয়ামও দামি গাড়িতে চড়েন। তিনিও মানুষকে বিভিন্ন সময়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। বাবা ও ছেলে মিলে সেসব ছবি এবং ভিডিও নিয়মিত প্রচার করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

প্রশ্নফাঁস-কাণ্ড সামনে আসার পর ডাসারে আবেদ আলীর গ্রামের বাড়িতে গেলে, বাড়িটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে কাউকেই পাওয়া যায়নি।

গত ১৮ মে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন আবেদ আলী। সেখানে তিনি পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নির্মাণাধীন হোটেল ‘সান মেরিনা’র অংশীদার হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাসহ পিএসসির ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আবেদ আলীকে গ্রেফতারের পর সোমবার থেকে এ হোটেলটি নিয়েও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রশ্নফাঁস করে অর্জিত সব অর্থ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছেন দাবি করে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবেদ আলী বলেন, গাড়িচালক ছিলাম ১৫ বছর আগে, এখন ব্যবসায়ী। প্রশ্নফাঁসে যে টাকা কামাই করেছি, সব খরচ করেছি আল্লাহর রাস্তায়। ‘আমার জীবনে কোনোদিন অসদুপায় অবলম্বন করিনি। গায়ে খেটে ভাগ্য পরিবর্তন করেছি’- গত ১২ জুন ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওর ক্যাপশনে এমন কথাও লিখেন তিনি।

স্থানীয় মিন্টু সরদার  বলেন, আবেদ (সৈয়দ আবেদ আলী) আমার কাছ থেকে ২৬ শতাংশ জমি কিনেছেন। প্রায় এক বছর আগে আমি তার কাছে এ জমি বিক্রি করেছি।

নাম প্রকাশ না করে এলাকার কয়েকজন জানিয়েছেন, আবেদ আলী গ্রামে বহু ফসলি জমি কিনেছেন। নিজের নামে ছাড়াও স্ত্রী-সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও জমি কিনেছেন। তদন্তে তার সম্পদের আরও তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

স্থানীয় প্রতিবেশী আ. রহিম মাতুব্বর বলেন, আবেদ আলী অনেক কষ্ট করেছেন। একসময় গাড়ি চালানো শিখে ড্রাইভারের চাকরি নেন।এরপর ধীরে ধীরে ধনী হয়েছেন। বর্তমানে তার গাড়ির ব্যবসা, হাউজিং ব্যবসা, জমির ব্যবসায়সহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসা করেই তিনি বড়লোক হয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, আবেদ আলীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করবো।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ বলেন, পিএসসির সাবেক এ গাড়িচালকের অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


facebook sharing button
twitter sharing button
linkedin sharing button
blogger sharing button
pinterest sharing button
email sharing button
sharethis sharing button




● সর্বশেষ সংবাদ  
● সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
অনুসরণ করুন
     
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী
স্বদেশ গ্লোবাল মিডিয়া লিমিটেড -এর পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক আবরণ প্রিন্টার্স,
মতিঝিল ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ১০, তাহের টাওয়ার, গুলশান সার্কেল-২ থেকে প্রকাশিত।
ফোন: +৮৮০২-৮৮৩২৬৮৪-৬, মোবাইল: ০১৪০৪-৪৯৯৭৭২। ই-মেইল : e-mail: swadeshnewsbd24@gmail.com, info@swadeshpratidin.com
● স্বদেশ প্রতিদিন   ● বিজ্ঞাপন   ● সার্কুলেশন   ● শর্তাবলি ও নীতিমালা   ● গোপনীয়তা নীতি   ● যোগাযোগ
🔝
原文
この翻訳を評価してください
いただいたフィードバックは Google 翻訳の改善に役立てさせていただきます