সাত মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ডলার রিজার্ভ কমেছে ১ বিলিয়নের বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

আমদানি দায় ও ঋণ পরিশোধের জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের বিদেশী হিসাবে (নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট) ডলার জমা রাখে। গত অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা ডলারের রিজার্ভ বেড়েছিল ৬ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরে তা ক্রমেই নিম্নমুখী। বিশেষ করে গত সাত মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ কমেছে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকগুলোর দায় পরিশোধের তুলনায় ডলার প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া সোয়াপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার সরবরাহের কারণেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত এপ্রিল শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা ডলারের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫০৪ কোটি ৭৩ লাখ, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৪৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ডলার স্থিতি ছিল ৫৯০ কোটি ৫ লাখ। এর পরের মাস আগস্টে তা কিছুটা কমে ৫৮০ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি ৬১৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছিল। এরপর থেকে তা ক্রমেই কমতে থাকে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে ৫৯২ কোটি ৪০ লাখ, নভেম্বরে ৫৯৭ কোটি ৯ লাখ, ডিসেম্বরে ৫৫৫ কোটি ৯৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৫৮৪ কোটি ৪২ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৫৫৩ কোটি ৪৫ লাখ ও মার্চে ৫৪৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের রিজার্ভ ছিল দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে।

সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। জুলাই-মার্চ সময়ে ৪৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল ৫৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। 

আমদানি কমার বিপরীতে এ সময় অবশ্য দেশের রফতানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রফতানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৪৫ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের। সে হিসাবে এ সময়ে রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। 

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ উৎস রেমিট্যান্স আহরণও কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ১৯ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স।

আমদানি কমার বিপরীতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও দেশের রিজার্ভ ক্রমেই নিম্নমুখী। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসারে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ গত এপ্রিল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ ক্ষয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক হিসাবের ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এ ঘাটতি ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। 

আর্থিক হিসাবে এ ঘাটতিকে উসকে দিয়েছে রফতানির অপ্রত্যাবাসিত অর্থ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে নিট ট্রেড ক্রেডিট ছিল ঋণাত্মক ১২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। দেখা যাচ্ছে, রফতানির পরিমাণ বাড়লেও এর বড় একটি অংশ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাচ্ছে, যার প্রভাবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বাড়ছে ও রিজার্ভে ক্ষয় হচ্ছে। 

সরকার বর্তমানে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়ার চেয়ে পরিশোধ করছে বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে নিট বিদেশী ঋণ ছিল ঋণাত্মক ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। 

জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা সত্ত্বেও দায় মেটাতে ব্যাংকগুলোকে কিছু ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। অন্যদিকে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ডলার আসছে না। এ কারণেই ব্যাংকগুলোর ডলারের রিজার্ভ কমে গেছে। কমেছে তাদের দায় শোধের সক্ষমতাও। যদিও দায় সামনে আরো বাড়বে।’ 

এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দূরদর্শী নীতি গ্রহণ জরুরি জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘ডলারের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, কোনো কারণে যেন এ থেকে পিছিয়ে না আসা হয়। তবে এটি একটি মধ্যবর্তী পন্থা, শেষ পর্যন্ত আমাদের পুরোপুরি বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের দিকেই যেতে হবে। এতে হয়তো একলাফে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, কিন্তু পরিস্থিতি উত্তরণে এটি সহ্য করতে হবে আমাদের। ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হয়ে গেলে রফতানি অর্থ প্রত্যাবাসনে গতি আসবে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যদি ডলারের প্রবাহ বাড়ে তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

এদিকে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এতে উৎসাহ দিচ্ছে। প্রবাসীদের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ উৎসাহিত করতে বর্তমানে দেশের ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। 

ডলার সংকটের মধ্যে একসঙ্গে এত ব্যাংক এমডির বিদেশ সফর নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা-সমালোচনাও চলছে বেশ। তাই এ বিষয়ে ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিবি) গতকাল এক বিবৃতি দিয়েছে। সংগঠনটির চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন স্বাক্ষরিত সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিজ (ডিওজে) ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি সংলাপের আয়োজন করেছে। ২০-২৩ মে আয়োজিত এ ষষ্ঠ বার্ষিক ইউএস-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ব্যাংকিং সংলাপে বাংলাদেশের ২৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে অংশ নিতে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ডিওজের এ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অগ্রণী, ব্র্যাক, সিটি ও ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমডিরা নিউইয়র্কে অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট প্রোডাক্টসের প্রসারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। চার ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ডলার ডিপোজিট আহরণের এ প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসির মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের ব্যাংকিং সংলাপটির কোনো সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আমন্ত্রণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। পাশাপাশি চার ব্যাংক মিলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে ৩০০-৩৫০ বাংলাদেশী ও বিদেশীরা থাকবেন। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন


শেষ পাতা

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ বাড়ছে

প্রিন্ট করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২২, ২০২৪

ছবি : বণিক বার্তা

সর্বজনীন পেনশনে গত মার্চে ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন স্কিম যোগ করে সরকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ দেশের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, প্রত্যয় স্কিমের আওতায় এলে কারো স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না এবং বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে। কিন্তু এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রায় দুই মাস ধরে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত সোমবার শিক্ষকরা হুঁশিয়ারি দেন, তাদের সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। শিক্ষকদের যুক্তি, বর্তমান পেনশন ব্যবস্থার চেয়ে প্রত্যয় স্কিমে সুযোগ-সুবিধা কম। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে প্রত্যয় স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তকে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবনমনের অপচেষ্টা হিসেবে।

মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার সঙ্গে ১৩টি ক্ষেত্রে প্রত্যয় স্কিমের সুযোগ-সুবিধার তুলনা করা হয়। এতে বলা হয়, বিদ্যমান পেনশন স্কিমে বেতন থেকে কোনো অর্থ কাটা হয় না। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা কেটে নেয়া হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক সুযোগ রয়েছে, যেটি প্রত্যয় স্কিমে নেই। বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনভোগী ও নমিনি আজীবন পেনশন পেয়ে থাকেন। সর্বজনীন পেনশনে সে সুযোগ নেই।

মূল্যায়ন প্রতিবেদনে শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনের ওপর বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট, দুটি উৎসব ভাতা ও বৈশাখী ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে এ ব্যবস্থা নেই। এলপিআর ও অর্জিত ছুটি নগদায়নের সুযোগও মিলবে না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর হলেও প্রত্যয় স্কিমে ৬০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। 

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন হয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতি নিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন’ এ সংবাদ সম্মেলন ডাকে। এতে বলা হয়, ২৫ মের মধ্যে প্রত্যয় স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরদিন থেকে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন হবে। ২৮ মে থাকবে কর্মবিরতির কর্মসূচি। এর পরও দাবি আদায় না হলে আগামী ৪ জুন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। এদিন নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করবেন তারা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে ১ জুলাই ও তার পরে যোগদানকারী কর্মীরা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। 

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘শুরুতে বলা হয়েছিল, যারা পেনশনের আওতায় নেই, তাদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আগে থেকেই পেনশনের আওতায় আছেন এবং বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় তারা সন্তুষ্ট। তাহলে তাদের কেন এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে? শিক্ষক ছাড়া আরো যারা বর্তমানে সরকারি পেনশনের আওতায় আছেন, তাদের ক্ষেত্রে তো এমনটি করা হয়নি। আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারাও। আশা করব, সরকার শিগগিরই আমাদের দাবি মেনে নেবে। নইলে শিক্ষকরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।’ 

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘নতুন ব্যবস্থায় অবশ্যই আগের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে তার উল্টো। আমরা ৫৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ স্কিমের বিপক্ষে। এটি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীরা আগ্রহ হারাবেন।’ 

ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবী সরকারের কোষাগার থেকে বেতন পান। সবার জন্য আর্থিক নীতিমালা একই। এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ স্কিমে নেয়া হলে অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষকদের তুলনামূলক বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। মেধাবীদের এ পেশায় আকৃষ্ট করতে ও গবেষণায় উৎসাহ দিতেই এটি করা হয়। বাংলাদেশে এ চর্চা এখনো নেই। এর মধ্যে শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত হলে বৈষম্য আরো বাড়বে এবং শিক্ষকতায় মেধাবীরা আগ্রহ হারাবেন।’

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। সবচেয়ে মেধাবীরা সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আসেন। এ পেশায় যদি পেনশন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে বা অন্যদের তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা থাকে, তাহলে তরুণরা শিক্ষকতায় আগ্রহ হারাবেন। ইউজিসির পক্ষ থেকে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান এবং শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’


শেষ পাতা

ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং

অস্ট্রেলিয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার আশ্বাস

প্রিন্ট করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২২, ২০২৪

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানান ঢাকায় সফররত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম আল্লামা সিদ্দিকী ও ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

পরে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের পরও বাংলাদেশী পণ্যের জন্য ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি সুবিধা অব্যাহত রাখবে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী ও শিক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিবেশ ইস্যুতেও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পেনি ওং দুদিনের সফরে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। গত ২৬ বছরে এটিই প্রথম কোনো অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর। এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রফতানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশীদের মৌসুমি কর্মসংস্থান ও প্রবাসীদের কল্যাণ, অবৈধ অভিবাসন রোধ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ১০০টি বিশেষ ইকোনমিক জোন ও ৪০টি আইটি ভিলেজে অস্ট্রেলীয় বিনিয়োগ এবং জ্বালানি ও পরিবেশ সংরক্ষণে সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে বৈঠকে।’

পরে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, ‘সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে ব্যাপক উন্নতি করেছে, তা আরো এগিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়া পাশে থাকতে চায়।’ দুই দেশের জনগণ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে দুই দেশই উদ্যোগ নেবে বলেও জানান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে পেনি ওং জানান, মেরিটাইম সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য তার দেশের কোস্টগার্ড প্রধান বাংলাদেশ সফর করবেন। ভারত মহাসাগরীয় দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন পেনি ওং। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী বলে জানান তিনি। দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গেও পেনি ওং সাক্ষাৎ করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরেও যান অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দুদিনের এ সফরে আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে পেনি ওংয়ের। পরে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।


শেষ পাতা

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন

১৫৬ উপজেলায় ভোট আজ

প্রিন্ট করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২১, ২০২৪

দ্বিতীয় ধাপে ২৪ উপজেলার ১ হাজার ৭৮৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ১৫৬ উপজেলায়। এর মধ্যে ২৪ উপজেলায় ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ভোট চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় ১৯ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। দ্বিতীয় ধাপে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৩ হাজার ১৬টি। এর মধ্যে ১৬ উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২৮ প্রার্থী নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আটজন এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন করে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে ২২ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর সাতজন করে চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন আটজন। 

দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হয় গত ৩০ এপ্রিল। এরপর চূড়ান্ত হয় ১ হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫২৮ জন। ১ মে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নির্বাচনী প্রচারে নামেন প্রার্থীরা। দ্বিতীয় ধাপে ২৪ উপজেলার ১ হাজার ৭৮৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে। এসব কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ।

দ্বিতীয় ধাপের ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো বিধিনিষেধ বা নিয়ম নেই যে কত শতাংশ ভোট পড়লে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এ নিয়ে ইসি উদ্বিগ্ন নয়। যেকোনো শতাংশ ভোট পড়লেই ইসি খুশি।’

মো. আলমগীর বলেন, ‘ভোটাররা ভোট দিতে ইচ্ছুক। তারা কেন্দ্রে আসবেন। তবে ধান কাটার মৌসুম, বৈরী আবহাওয়া ও বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসায় ভোটার উপস্থিতি কম। বিএনপি ভোট বর্জনের জন্য লিফলেট বিতরণ করছে, এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে কোনো সহিংসতা হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন।’

রোববার হলফনামা বিশ্লেষণ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৭০ দশমিক ৫১ শতাংশই ব্যবসায়ী। এছাড়া ১১৬ প্রার্থীর ১ কোটি টাকা বা তার বেশি সম্পদ রয়েছে। পাঁচ বছরে পদে ছিলেন এমন একজন প্রার্থীর আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯০০ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ পর্যন্ত।